সড়কে মৃত্যুর বিভীষিকা : প্রশাসন প্রতিকারে ব্যর্থ হচ্ছে

বাস, টেম্পো, মাইক্রোবাস, স্কুটার, রিকশা যে মাধ্যমেই চলাচল হোক না কেন, কোনোটাই এখন আর নিরাপদ বলা যাচ্ছে না। সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যু এখন বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে অথচ প্রশাসনের কোনরূপ তৎপরতা নেই এর প্রতিকারে। মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলিও দুর্ঘটনাকে গা-সওয়া হিসেবে নিয়েছে অথচ প্রতিদিনই মায়ের কোল খালি হচ্ছে। স্বজন হারানোর ক্রন্দন কিছুতেই থামছে না। চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলায় গত শুক্রবার পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮। শুক্রবার দুপুরে স্টিল মিল এলাকায় একটি বাস এক পথচারীকে চাপা দিয়ে পালানোর সময় রিকশাকে চাপা দিলে রিকশার আরোহী দাদি ও নাতনি প্রাণ হারায়। ঐদিন কর্ণফুলীর মইজ্জার টেক এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অটোরিকশা-মিনিবাস-বাসের ত্রিমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় ৩ জন, আহত হয়েছে ১২ জন। বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় বৃষ্টির কারণে রাস্তা স্যাঁতসেঁতে হয়ে যাওয়ায় আখতারুজ্জামান ফ্লাই ওভারে (ইউনেস্কো সিটি সেন্টারের সামনে) একটি মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারের সাথে ধাক্কা খেলে কিশোর চালক প্রাণ হারায়। কাট্টলির রাসমণিঘাট এলাকায় শুক্রবার সকালে গাড়ির ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারায় ১ জন। প্রতিদিন সড়কে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটছে ছাত্র, কিশোর, তরুণ, নারী, শিশু, সাধারণ যাত্রী, পথচারীর। প্রতিটি পরিবারে স্বজন হারানোর যে আহাজারি নিত্যদিন, প্রশাসনের তার আঁচড়টুকুও লাগেনা। প্রতিটি মৃত্যু যে জাতিকে ক্ষয় করছে, প্রশাসনে কর্মকর্তা, যানবাহন মালিক, চালকের হৃদয়ে কোনো আলোড়নই তুলতে পারছে না। যে চালক পথচারীকে চাপা দিয়ে রিকশা আরোহী ২ জনকে চাপা দিলো অবলীলায় কিংবা ত্রিমুখি সংঘর্ষে যে ৩ জন নিহত ও ১২ জন আহত হলো সে সব যানবাহনের চালকদের কি কোন শাস্তি হবে। কয়দিন এদিক সেদিক অপেক্ষা করে তারা আবার অন্য গাড়ি চালাবে। মালিক কিংবা শ্রমিক সংগঠন এসব ভয়াবহ অপরাধের কথা জেনেও নির্মোহ নির্বিকার থাকছে।
কিভাবে শাস্তি হবে, আইনের কার্যকর প্রয়োগ কোথায়? সড়ক আইনটি মালিকÑশ্রমিক সংগঠনের চাপে আলোর মুখ দেখছে না অথচ মালিকÑশ্রমিক সংগঠনের নেতারা সরকারি দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরও নেতা। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় এত প্রাণ যাচ্ছে, তারা তো প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না। আইনের কার্যকারিতা না থাকায় ভুক্তভোগী পরিবার কোন মামলা করতে পারে না। ক্ষতিপূরণ পাবে কিভাবে! ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হয় না, এতে মালিক পক্ষ-চালক সুবিধা পেয়ে যায়, শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না। অদক্ষ, অপ্রাপ্তবয়স্ক, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীনদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়, কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। চালক কিংবা সহকারি নিয়োগ দেওয়ার সময় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, শারীরিক-মানসিক অবস্থা, পূর্বের অপরাধকর্ম যাচাই হয় না। চালকদের ডোপ টেস্ট নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছেনা। অধিকাংশ চালক ট্রাফিক নিয়মকানুন বিষয়ে অজ্ঞ। ট্রাফিক আইন নিয়ে জনগণের সচেতনতাও কম। প্রশাসনের প্রচার প্রচারণা সামান্য। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, মালিক-চালক সংগঠন কেউ কোনো দায় নিচ্ছে না এসব অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর। তাহলে দুর্ঘটনা কমবে কি করে?