স্বামীর ১০ বছর পর পুত্র হারালেন খালেদা

মিরসরাইয়ে রুমন হত্যা

নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই »

১০ বছর আগে আমি স্বামী নূরে জামানকে হারিয়েছি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। ১০ বছর পরে শুক্রবার রাতে মেঝ সন্তান রুমনকে হারিয়েছি। কি দোষ ছিল আমার অবুঝ সন্তানের? আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। কথাগুলো বলছিলেন মিরসরাইয়ে আজমপুর বাজারে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংর্ঘষে নিহত রায়হান হোসেন রুমনের মা খালেদা আক্তার।

রুমন উপজেলার ওসমানপুর বাজারে নানার বাড়িতে থেকে পানি সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো।

নিহত রুমনের মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর দরিদ্রতার কারণে আমি তিন ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। মেঝ ছেলে রুমন আজমপুর নানার বাড়িতে থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। এরপর আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে দারিদ্রতার কারণে স্থানীয় একটি পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়। সেই বেতনের অধিকাংশ আমাকে খরচের জন্য দিতো। এখন কিভাবে আমার সংসার চলবে?

রুমনের নানা আবুল কাশেম বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। শুক্রবার রাতে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংর্ঘষে ভিডিও ধারণের সময় আমার নাতি রুমনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছে তাকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পিটিয়ে মেরেছে।

এদিকে শুক্রবার রাতে আজমপুর বাজারে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের গ্রামের বাড়িতে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার ঘরের বিভিন্ন আসবারপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, শুক্রবার রাতে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। এ সময় তাদের ২১ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রুমন আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংর্ঘষের সময় ভিডিও ধারণ করছিল। তাকে কে বা কারা ধাওয়া করে হামলা করেছে তা আমরা জানি না।

শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যান দাবি করেন ঘটনার সময় জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে শনিবার দুপুরে নিহতের মা বাদি খালেদা আক্তার বাদি হয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৬০-৭০ জন অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে। আটকরা হলেন, ধুম ইউনিয়নের মোবারকঘোনা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে রিফাত, একই এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মেহেরাব হোসেন, ওসমানপুর ইউনিয়নের বাঁশখালী এলাকার মজিবুল হকের ছেলে ফরিদ ও ছুনুমিঝিরটেক এলাকার ফরিদুল হকের ছেলে রাকিব।

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদ হোসেন জানান, শনিবার দুপুরে নিহতের মা খালেদা আক্তার বাদি হয়ে বিএনপি নেতা নুরুল আমিনকে প্রধান আসামি করে আরো ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০-৭০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার সময় বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যান ফোন দেয়নি।