সেন্টমার্টিনে হাসপাতাল থাকলেও নেই ডাক্তার!

সেন্টমার্টিন

চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত ১০ হাজার মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধি, টেকনাফ :
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ কক্সবাজার টেকনাফের সেন্টমার্টিন। দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে অতি প্রিয় সেন্টমাটিন দ্বীপ। কিন্তু এখানকার জনসাধারণ এবং পর্যটকরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ডাক্তারের অভাবে।
দ্বীপে একটি হাসপাতালের থাকলেও নিয়মিত ডাক্তার না থাকায় তারা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। নামে মাত্র ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল রয়েছে। সুন্দর অবকাঠামের উপর যা কেবল দাঁড়িয়েই আছে। ১০ শয্যা বিশিষ্ট ৩ তলা হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তারের কারণে পড়ে আছে। সেই থেকে কারণে-অকারণে হাসপাতালটি নিজস্ব গতিতে এখনো যাত্রা করতে পারেনি। অবকাঠামোসহ সবকিছু সুবিধা থাকার পরও ডাক্তার না থাকায় দ্বীপের মানুষ যুগ যুগ ধরে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিকে দ্বীপের চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সভায় হাসপাতাল সংক্রান্তে কথা বলেও কোন ধরনের সুরাহা হয়নি। চেয়ারম্যান নিজেই বহুবার সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবহিত করার পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
জানা গেছে, ১০ শয্যা হাসপাতালটিতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছেন। তিনি কখনো সেন্টমার্টিনে আসেন না। দ্বীপে পদায়নকৃত ডাক্তাররা না আসায় বছরের পর বছর এখানকার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ডাক্তার এবং কোন ধরনের নার্স না থাকায় জটিল এবং সাধারণ রোগীদের সেবা নিতে সাগর পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফ শহরে আসতে হয়। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার সাগর পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। বর্ষা এবং দুর্যোগের সময় সেবা না পেয়ে অনেক রোগী অকালে মৃত্যুবরণও করছেন।
স্থানীয়রা জানায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার জনসংখ্যা রয়েছে। এছাড়া সারা বছর পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ দ্বীপে অবস্থান করেন। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৩/৪ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে। স্থানীয় জনসাধারণসহ এসব লোকদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার মত কোন ডাক্তার নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক মনে করেন দ্বীপের অধিবাসীরা।
সনজিদা আক্তার নামের স্থানীয় এক গৃহবধূ জানান, ৬ মাস একবছর পর হঠাৎ ডাক্তার আসেন। তিনি আরো জানান, ডাক্তার এবং নার্স না থাকায় গর্ভবতী মায়েরা কোন ধরনের সেবা পাচ্ছেন না। গর্ভবতী মায়েদের টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে গিয়েই চিকিৎসা নিতে হয়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান খান জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ মৌলিক অধিকার তথা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জটিল এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য টেকনাফ শহরে নিয়ে আসা হয়। সাগর দিয়ে আসার পথে অনেক সময় রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তিনি দ্বীপের মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার, নার্সসহ প্রয়োজন সংখ্যক জনবল নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, ডাক্তার এবং কোন ধরনের নার্স না থাকায় দ্বীপবাসী এবং পর্যটকরা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না। তিনি সেন্টমার্টিনে মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল জানান, একজন এমএলএসএস এবং আরেক সেকমো দিয়ে হাসপাতালটি কোনমতে চলে আসছে। ডাক্তার সমস্যার বিষয়টি পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অচিরে ডাক্তারের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
এবিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের জনসাধারণ এবং পর্যটকদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।