বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারী ও উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ হাই কোর্টের

সুপ্রভাত ডেস্ক :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘ভাঙচুরকারী, অপরাধী ও ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে উসকানিদাতাদের’ বিরুদ্ধে সংবিধান এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
সেই সঙ্গে ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে এবং এসব বিষয়ে জনমনের বিভ্রান্তি দূর করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও বায়তুল মোকারম মসজিদের খতিবকে তাদের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
জাতির পিতার ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
জাতির পিতার ভাস্কর্যের সুরক্ষা, যথাযথ মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে ‘স্বার্থান্বেষী মহল, ভাঙচুরকারী ও অপরাধীদের’ বিরুদ্ধে সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ ও দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ভাঙচুরকারী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ প্রধান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক ও নাহিদ সুলতানা যুথী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
পরে আইনজীবী মনজুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত রুল জারি করেছেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ যেসব বিবাদী রয়েছে, তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।’
গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়।
একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।
এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া’ হবে।
তাদের এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যেই শুক্রবার গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ভাঙচুর চালানো হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্যের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত রোববার হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উত্তম লাহিড়ী।
ওই দিন দুপুরে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে রিটটি উপস্থাপন করেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি।
পরে রুলের শর্ত সংশোধন করে আরেকটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সংশোধিত আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদেশ দিল উচ্চ আদালত।