সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর জীবনযাত্রার লাগাম নিয়ন্ত্রণ করা দরকার

কোভিড-১৯ এর কালোছায়া থেকে পৃথিবী বুঝি আর অচিরকালের মধ্যে নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। পৃথিবী বিগত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে এমন সর্বগ্রাসী বিপদের মুখে পড়েছে, এমন নজির নেই বললেই চলে। সময়ে-সময়ে যুদ্ধবিগ্রহ, খাদ্যসংকট, অর্থনৈতিক মন্দা প্রভৃতি পরিদৃষ্ট হলেও তা ছিল নির্দিষ্ট দেশ বা ভূখ-ের বলয়ে সীমাবদ্ধ। করোনাভাইরাস দ্বারা গত ২০২০ সালের প্রারম্ভ থেকে বিশ্ব এমন দুর্যোগে পতিত হয়েছে, যার সমাধানের কোনো সহজ পন্থাও উদ্ভাবন সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনার শ্লথগতির সামান্য সুবাতাস পরিলক্ষিত হলে কিঞ্চিৎ স্বস্তির আভাস দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা আবার ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে ভাইরাসটির আগ্রাসীরূপের কাছে। সরকার ও সচেতনমহলের সকল আশাবাদকে ধূলিস্যাৎ করে করোনার ভয়ঙ্কর থাবা মানুষের উদ্যম ও গতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেই চলেছে যেন।
অতিসম্প্রতি দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপক আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লকডাইন দেওয়া হয়েছে। সেখানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে ২০ জনের শরীরে। একইভাবে সীমান্তবর্তী অন্য জেলা নওগাঁতেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। সেখানকার ডেপুটি সিভিল সার্জন জানাচ্ছেন, গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শতকরা প্রায় ৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন এখানে। এবং পরদিন শুক্রবার (২৮ মে) ৪৫জনের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ন্যূনতম ২২টি জেলায় সংক্রমণের হার বেড়েছে। আর সরকারি ভাষ্যমতে, চাাঁপাইনবানগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙা, ঝিনাইদহ এবং যশোরে গত সপ্তাহে সংক্রমণ খুব বেশি ছিল। সীমান্তবর্তী এসব জেলার প্রতিটিতে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের বেশি। খুলনা ও রংপুর বিভাগে সংক্রমণের এ হারে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলেই ধারণা করা যায়।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, নানা দরকারি প্রয়োজনে সরকারিভাবে যারা সীমান্ত পারাপার করছেন তারা সরকারি ব্যবস্থাপনাতে বিধিবদ্ধ নিয়ম-কানুনের ভেতরে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার আওতায় আছেন, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু যে-সমস্ত সীমান্তবাসী পারিবারিক প্রয়োজনে নিত্যই সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন সকালে-বিকালে এবং আবার ফিরেও আসছেন, তারা কি সরকারি পর্যবেক্ষণের আওতায় আছে? একটি সূত্র বলছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নানা প্রয়োজনে এপার-ওপার করে থাকে। এই সংখ্যাটি একেবারে দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাচ্ছে কিনা গুরুত্ব দিয়ে দরকার। কারণ, এরা নানাভাবেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বাহক হতে পারে।
এই সতর্কতা ও তৎপরতার পাশাপাশি সরকার যে করোনাভাইরাসের টিকা বা প্রতিষেধক আমদানির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে, আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বস্তুত এখন সম্ভাব্য সকল উৎস থেকেই ভ্যাকসিন সংগ্রহের কোনো বিকল্প নেই। দেশের মানুষের অন্তত ৭০ শতাংশকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনাই এখন প্রথম এবং প্রধান কাজ। আশার কথা যে, সরকারও সেই পথেই এগোচ্ছে। আমরা ভ্যাকসিন আমদানির প্রক্রিয়া দ্রুততর করা এবং তার প্রয়োগে সরকারের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।