সিইসির কথায় আস্থা রাখতে চাই

মঙ্গলবার বিকালে নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডে পিটিআই অডিটোরিয়ামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটের স্বচ্ছতা তুলে ধরতে সংবাদকর্মী ও পর্যবেক্ষকরা প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়াই কেন্দ্রে ঢুকে ছবি তুলতে পারবেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা অ্যাপ তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে দুই ঘণ্টা পরপর কত ভোট পড়েছে মানুষ সেটি মোবাইল ফোনে জানতে পারবে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেকোনো মূল্যে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে অনেকে কালো টাকার বিনিময়ে পেশাদার কিছু সন্ত্রাসী ব্যবহার করে। তারা যাতে ভোটকে প্রভাবিত না করতে পারে সেই বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোটের মাঝে যদি কোনো পেশিশক্তির উদ্ভব ঘটে তাহলে আমাদের অবহিত করা হলে সেসব ভোটকেন্দ্রে ভোট আমরা বন্ধ করে দেব। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি, অনেকে আশ্বস্ত হয়েছেন, কেউ কেউ আশ্বস্ত না-ও হতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে আমরা বলতে চাই, এই ধরনের ঘটনা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবে না।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আলাদা। এখানকার নির্বাচনী সংস্কৃতিও আলাদা। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসে দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ে এমনকি একই দলের একাধিক প্রার্থীর মধ্যেও রেষারেষি, মারামারির ঘটনা ঘটতে থাকে। অনেক সময় পরস্পর এতই সহিংস হয়ে ওঠে যে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। আর অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্যাম্প ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। জাল ভোট, কেন্দ্র দখল ইত্যাদির মতো ঘটনা মোকাবেলায় সদা সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সিইসি একটি নতুন তথ্য দিয়েছেন। বিশেষায়িত অ্যাপের মাধ্যমে ভোটের দিনের পরিস্থিতি জনগণ অবগত হতে পারবেন জানিয়ে সিইসি বলেন, আমরা একটি অ্যাপ তৈরি করেছি। এ অ্যাপে দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর ভোটের তথ্য ইনপুট দেওয়া হবে। কতটুকু ভোট সংগ্রহ হয়েছে তার তথ্য থাকবে। সাধারণ মানুষ ওই অ্যাপ মোবাইল ফোনে ইনস্টল করে নির্বাচনের তথ্য জানতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ১০টার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এজন্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপক নিয়েছি, যাতে ভোটগ্রহণের সত্যতা মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে।
এটি কীভাবে কাজ করবে তা বুঝতে না পারলে বুঝতে পারছি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আন্তরিক। সিইসি বলেছেন, কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি যদি কোনো ভোটকেন্দ্রে কোনোভাবে প্রবেশ করে, তাহলে বুঝতে হবে তার কুমতলব রয়েছে। ফলে কোনো কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। আমরা কঠোর বার্তা দিয়েছি, কোনোভাবে তা বরদাশত করা যাবে না। আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতির মধ্যে কালো টাকার বিনিময়ে পেশাদার গুন্ডাদের ভাড়া করেন। তাদেরকে বলা হয় পেশিশক্তি, মাসল পাওয়ার। মাসল পাওয়ার যাতে ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পরে সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। এখন আমরা নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তা সুনিশ্চিত করবে নির্বাচন কমিশন।