সবজিতে স্বস্তি, মুরগিও নাগালে

সালাহ উদ্দিন সায়েম :
ঈদের পর নগরীতে সবজির বাজারের চিত্র পাল্টে গেছে। প্রায় সব সবজির দাম কমেছে কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত। ঈদের আগে উত্তাপ ছড়ানো ব্রয়লার মুরগী এখন কেজিতে ৪০ টাকা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বিভিন্ন মাছের দাম। অপরিবর্তিত আছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চাল, ডাল ও তেলের দাম।
শুক্রবার সকালে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রমজানের সময় বেগুনের কেজি ছিল ৭০-৮০ টাকা। সেই বেগুন এখন কেজি প্রতি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পটল, কাকরোল, ঢেড়স, তিতকরলার, ঝিঙা ও চিচিঙ্গার কেজি ছিল ৬০-৭০ টাকা। এসব সবজি এখন কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে শসা ও পেঁপের দাম বাড়তি। শসার ৮০ ও পেঁপে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম কমে যাওয়াতে ব্যাগভর্তি সবজি কিনছেন ক্রেতারা।
চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা মোখলেসুর রহমানকে দেখা যায় ব্যাগভর্তি ঢেড়স, তিতকরলা ও কাকরোল কিনতে। হাসিমুখে তিনি বললেন, দাম কম, তাই ফ্রিজ ভরে রাখতে বেশি করে কিনেছেন।
সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ৩১ মে থেকে অফিস খুলছে। সেই সঙ্গে গণপরিবহন চলাচলের কথা বলা হয়েছে। কাজেই ৩১ মের পর থেকে মানুষের চলাচল বাড়বে। যারা গ্রামের বাড়িতে রয়েছে তারাও ফিরে আসবে। ফলে সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এতে তখন দামও কিছুটা বাড়তে পারে।
রমজান শেষ হওয়ার পরও দাম বাড়তি গাজরের। রোজায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজর ঈদের পর আরো বেড়ে যায়। বাজার ও মানভেদে গাজরের কেজি এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
গাজরের উর্ধ্বমুখী দামের বিষয়ে কর্ণফুলী মার্কেটের ব্যবসায়ী শফিউল আলম বলেন, গাজরের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। এখন বাজারে গাজরের সরবরাহ একেবারে কমে গেছে। এ কারণে গাজরের দাম বেড়েছে।
মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বেড়েই চলেছে টমেটোর। রোজার শুরুতে টমেটোর কেজি ছিল ২০-২৫ টাকা। ঈদের আগে ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে।
রোজার আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৯০-২০০ টাকা। ঈদের পর ব্রয়লার মুরগীর দামে ধস নামে। শুক্রবার পর্যন্ত কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। এখন ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চকবাজার আলী শাহ পোল্ট্রির স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম সুপ্রভাতকে জানান, করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে রোজার সময় খামারে মুরগির উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এতে সরবরাহ কমে গেছে। এখন আবার খামারে মুরগীর উৎপাদন হচ্ছে। তাই ফার্ম ও পাইকারিতে মুরগির দাম কমে আসছে। কয়েক দিনের মধ্যে দাম আরো কমবে।
ব্রয়লার মুরগীর মাংসের দাম কমে আসলেও বাড়ছে ডিমের দাম। ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগীর ডিম বিক্রি হয়েছিল ডজনপ্রতি ৮০ টাকা। ঈদের পর হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়। এখন ডজনপ্রতি ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দেশী মুরগীর ও সোনালী মুরগীর দাম স্থির রয়েছে। দেশী মুরগী কেজি প্রতি সাড়ে ৪০০ টাকা আর সোনালী মুরগী ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস (রান) বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস ৮০০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মাছের দাম। প্রতিকেজি শিং (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, বাগদা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ২২০ থেকে ৩২০ টাকা, মৃগেল ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, কৈ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ও কাতলা ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এককেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, ছোট ইলিশ আকারভেদে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের পর অপরিবর্তিত আছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। প্রতি কেজি পেঁয়াজ (ভারতীয়) বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা আর আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
প্রতিকেজি মিনিকেট (নতুন) চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি, মিনিকেট পুরান ৬০ টাকা, সিদ্দ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, পাইজাম ৪০ টাকা, প্রতিকেজি পোলাওর চাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা লিটার। দেশি মসুর ডাল (চিকন) ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।