সংসার চালানো দায়

বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম, বাড়ছে না আয়

নিজস্ব প্রতিবেদক »

ভোগ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। অথচ বাজার দরের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না মানুষের আয়। দামে দিশেহারা ক্রেতাদের এখন সংসার চালানো দায়। বর্তমানে চিনি আর তেলের দাম লাগামহীন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার তেল, পেঁয়াজ ও চিনিতে শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
গত এক বছরে চিনির দাম কেজিতে ১৮ টাকা বেড়েছে। দেশে চিনির চাহিদা বছরে ১৮ লাখ টনের মতো। অর্থাৎ ১৮০ কোটি কেজি। বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত বছর মার্চ মাসে। সেই থেকে বর্তমান মাস (আক্টাবর) পর্যন্ত ১৮ মাসে যদি গড়ে কেজিপ্রতি ১০ টাকা করেও বেশি মূল্য দিতে হয় তাহলে ক্রেতাদের চিনির জন্য গত ১৮ মাসে বাড়তি গুনতে হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
সরজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল বাজারে মোটা চাল কেজি প্রতি ৫২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। ময়দা বিক্রি ৪৪ টাকা। পেয়াঁজ প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। মসুর ডাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা।
বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৩ আক্টোবর মোটা চাল কেজি প্রতি দাম ছিল ৪৫ টাকা। আটা প্রতি কেজি বিক্রি হতো ২৮ টাকা। ময়দা ৩৩ টাকা। পেয়াঁজের দাম ছিল প্রতি কেজি ১৬ থেকে ৭০ টাকা। মসুর ডাল প্রতি কেজি ছিল ৬৫ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা। তবে গত বছর আক্টেবর মাসে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি ৮৫ টাকা বিক্রি হলেও নভেম্বর-ডিসেম্বরে দাম কমে কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। তবে সম্প্রতি দাম বেড়ে পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর্বে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। তখন মোটা চাল কেজি প্রতি ৩৬ টাকা, আটা বিক্রি হতো ২৬ টাকা। ময়দা বিক্রি ৩২ টাকা। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকা। মসুর ডাল ৬৭ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১১৫ টাকা।
একদিকে, বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে করোনার কারণে মানুষের ক্রমাগত চাকরি হারানো ও আয় কমে যাওয়ায় বিপাকে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। পোশাক কারখানায় কাজ করা মুবিন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বাজারে জিনিসের যে দাম, তাতে সংসার চালানো দায়। না খেয়ে মরতে হবে। আগে পরিবার ছিল শহরে ছিল এখন দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিছি।’
ভোগ্যপণ্যের বাজার পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে গত মাসের ৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকে দাম বেঁধে দেয়া হয়। প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৭৪ টাকা ও প্যাকেট চিনির দাম ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামে চিনি কিনতে পারছে না ক্রেতারা। অন্যদিকে বাজার ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে তেল পেঁয়াজ, চিনিতে শুল্ক আপাতত স্থগিত রাখাতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতি বিষয়ক লেখক ফাইজ তাইয়েব আহমেদ জানায়, ‘করোনাকালে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে মূল্যবৃদ্ধির আয়োজন চলছে। মূল্যবৃদ্ধির লাগামহীনতাকে সরবরাহ সংকটের সাথে মেলানো যাচ্ছে না, এমন কোন সংকট আদৌ নেই। এবার দেশে বন্যার প্রকোপ নেই।’
বাজারের অস্থিতিশীল আবস্থার জন্য মুদ্রাস্ফীতিকেও দায়ী করে তিনি আরো জানান, ‘সরকারের মনিটারিং পলিসি মূল্যস্ফীতি তৈরি করছে। অর্থাৎ বাজারে সস্তায় মুদ্রা সরবারহের নীতি (কম সিআরআর, এলএসআর) এবং করোনা প্রণোদনা প্যাকেজের নামে নতুন টাকা ছাপানোর যে অভিযোগ আছে তা মূল্যস্ফীতির লাগামহীনতার মাধ্যমে প্রমাণিত।’

উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতি তৈরি হলে বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।