শ্বশুরের মামলায় পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক »
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একই সাথে বাবুলের দায়ের করা মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য এ মামলার ডকেট সংযুক্তির আবেদনও করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় এ মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআই পুলিশ সুপার (মেট্রো) নাঈমা সুলতানা। অন্যদিকে বাবুল আক্তারের মামলায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন মহানগর দায়রা জজ আশফাকুর রহমানের আদালত।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই উপপরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পিবিআই পুলিশ সুপার মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।’
পিবিআই পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা সুপ্রভাতকে বলেন, ‘স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের করা মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এ মামলায় তথ্য-উপাত্ত যা ছিল তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে বাবুল আক্তারের ১৬৪ ধারায় বেশ কিছু জবানবন্দিও রয়েছে। বাবুল আক্তরের দায়ের করা যে মামলাটি আমরা তদন্ত করছি সেই মামলার সাথে এ মামলার ডকেট সংযুক্ত করে তদন্তের জন্য আদালতের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছি।’
তিনি দুটি মামলার বিষয়ে জানান, ‘ঘটনা যেহেতু একটি। ভিকটিমও একজন। তাই আদালতের আদেশ অনুযায়ী একটি মামলাই তদন্ত করছি। সাধারণত কোন অপরাধ হলে তাতে একটি মামলা রুজু হয়। এ মামলা আমরা তদন্ত করি। যদি কোন অপরাধে বাদি আসামি হয়ে যান, সেক্ষেত্রে আইনি রেওয়াজ অনুযায়ী তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে নতুন মামলা করলে আমরা সে মামলারও তদন্ত করতে থাকি। বাবুল আক্তার বাদি হয়ে যে মামলা করেছিলেন তা তদন্তের সময় হত্যার উদ্দেশ্য উদঘাটনের সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। আমরা এ মামলা অধিকতর তদন্ত করছি।’
মামলার টেকনিক্যাল ত্রুটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আদালতে আমাদের প্রার্থনা অনুযায়ী যদি আদেশ পেয়ে যাই তাহলে মামলার যে টেকনিক্যাল ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে অথবা অস্পষ্টতা বা যে আইনি জটিলতা রয়েছে আশা করছি ভবিষ্যতে তা আর থাকবে না।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় স্বামী বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অনেক নাটকীয়তা শেষে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত ভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রহস্য। ২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন বাবুল আক্তারের মামলায় আদালতে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডে বাদি বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
একইদিনে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।