শেখ হাসিনা-বাংলাদেশের জন্য নিরন্তর আশীর্বাদ

আবদুল মান্নান »

এ’বছর ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন । এ’দিন শেখ হাসিনা ঘটনাচক্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বা ওয়াশিংটনে ছেলে জয়ের সাথে থাকার কথা । বিগত বছরগুলোতে এমনটাই হয়ে আসছে । ২০২০ সালের মার্চ মাসে সারা বিশ্বের সাথে বংলাদেশও কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে থেকেই তাঁর সকল দাপ্তরিক কার্যকলাপ পরিচালনা করেছেন । এই প্রথম বারের মতো তিনি দেশে বা এমনকি ঢাকার বাইরে গেলেন তাও স্বল্পসংখ্যক সফর সঙ্গি নিয়ে । ৭৫তম জন্মদিনে শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ।
শেখ হাসিনা যখন তাঁর ৭৫তম জন্মদিনে তখন বাংলাদেশ তার জন্মের পঞ্চাশ বছর পার করে এসেছে । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষও পার হয়ে গেছে গত মার্চ মাসে । এই দিক থেকে গত একবছর বেশ ঘটনা বহুল। কোভিড-১৯ এর কারণেজাতির পিতার জন্ম শতবর্ষের প্রায় সবগুলো পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানের কিছুটা রদবদল করতে হয়েছে। পাল্টাতে হয়েছে তার ধরণ । কিন্তু কোন কিছুই থেমে থাকে নি । গত বছর যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণ তুঙ্গে তখন শেখ হাসিনা প্রথম বারের মতো জাতিসংঘে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না । তিনি অন লাইনে অংশ নিয়েছিলেন । সেই বছর বিশ্বের খুব কম নেতাই বিশ্বসভার এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরেছেন । তবে শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইম বেলা সাড়ে এগারটায় শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৮তম ভাষণটি দিয়ে এক অনন্য বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছেন । এর মধ্যে যেমনটি বলেছিলাম গত বছর ছাড়া তিনি সশরীরেউপস্থিত থেকে একটি দেশের একজন নির্বাচিত সরকার প্রধান হিসেবে সতেরটি ভাষণ দিয়ে যে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন যা সম্ভবত দীর্ঘদিন অটুট থাকবে ।
বছর কয় আগে শেখ হাসিনা গণভবনে বসেছিলেন বেশ কিছু তরুণ তরুণীকে নিয়ে তাঁর নিজের কথা বলতে । এক তরুণী বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে জানতে চাইলেন তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন তিনি কি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ? আমাদের ছোট বেলায় একটি সাধারণ প্রশ্ন ছিল ‘বড় হলে কি হতে চাও ’? আজকের প্রজন্মের কাছে এমন প্রশ্ন তেমন একটা কেউ করে না । করলেও তেমন একটা উত্তর জানা থাকে না অনেকেরই । শেখ হাসিনা বেশ স্বাচ্ছন্দের সাথে বলেছিলেন তিনি ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতেন বড় হলে ডাক্তার হবেন, তবে এসএসসি পরীক্ষায় অংকে ভাল নম্বর না পাওয়াতে তিনি ঠিক করেছিলেন স্কুলের শিক্ষক হবেন । ভাগ্য তাঁকে সেই সুযোগ দেয় নি তবে তিনি বর্তমান সময়ে দেশের জন্য অনেক বিষয়ে বড় শিক্ষক ।
শেখ হাসিনা রাজনীতিতে আসবেন তেমনটা কেউ ভাবেননি বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় । ঘটনা চক্রে তাঁকে রাজনীতিতে আসতে হয়েছে এবং তিনি বাংলাদেশের জটিল রাজনীতিতে আশীর্বাদ হয়েই এসেছেন । বঙ্গবন্ধুকে যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় তখন শেখ হাসিনা ও তাঁর একমাত্র ছোট বোন জার্মানিতে ছিলেন । সেখানে তিনি গিয়েছিলেন স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কয়েক সপ্তাহ আগে। বিদেশে থাকা অবস্থাতেই শেখ হাসিনা খবর পান সেই ভয়াবহ হত্যাকা-ের। যে শেখ হাসিনার বিদেশ যাওয়ার সময় সবকিছু ছিল সেই শেখ হাসিনা রাতারাতি সর্বহারা । পাশে একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর পিতার সাথে যারা আজীবন রাজনীতি করেছেন তাদের অনেকেই রাতারাতি ভোল পাল্টে পিতার ঘাতকদের অন্যতম মন্ত্রনাদাতা জেনারেল জিয়ার রাজনীতির সাথে তাদেরক্ষুদ্র স্বার্থে সম্পৃক্ত হয়ে যান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী। শেখ হাসিনাকে তখন রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে রাজি হন ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি । ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রার পূর্বে হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী বলেছিলেন ‘যাও মা তুমি একদিন ইন্দিরা গান্ধি হবে’। বাস্তবে শেখ হাসিনা সব দিক দিয়ে ইন্দিরা গান্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছেন । বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনাকে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেখেন । তাঁর নেতৃত্বে একটি স্বল্পোন্নত দেশ কি ভাবে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে তার প্রশংসা করতে বিশ্বসম্প্রদায় কখনো কার্পণ্য করেনি । পিতা তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে অনুন্নত (ঁহফবৎফবাবষড়ঢ়বফ) দেশ হতে বাংলাদেশকে স্বল্পন্নোত দেশে (ষবধংঃ ফবাবষড়ঢ়বফ পড়ঁহঃৎু) রূপান্তর করতে পেরেছিলেন । আর কন্যার হাত ধরে বাংলাদেশে উন্নয়নশীল (ফবাবষড়ঢ়রহম) দেশের কাতারে সামিল হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
পিতার হত্যার পর শেখ হাসিনা দীর্ঘ ছয় বছর ভারতে নির্বাসনে ছিলেন । দেশে আসতে চেষ্টা করেছিলেন কয়েকবার । জেনারেল জিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি দেশে আসতে পারেন নি । ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় তখন জিয়া বাধ্য হন শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার অনুমতি দিতে। ১৯৮১ সালের ১৬মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফেরেন । জিয়া যদিও তাঁকে দেশে ফেরার অনুমতি দিয়েছিলেন কিন্তু তার ধানমন্ডির পৈত্রিক বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি দেন নি । তিনি শুধু বত্রিশ নম্বরের সেই বাড়িতে ঘাতকদের গুলিতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত করতে চেয়েছিলেন। দমার পাত্র নন বঙ্গবন্ধু কন্যা । বাড়ির সামনে রাস্তার উপর বসেই দোয়া ও কুরআন তেলাওয়াত ওপনেরই আগস্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত করলেন ।
শেখ হাসিনার ভাগ্য খারাপ বলতে হবে কারণ তাঁকে বেশী দিন জিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয় নি । শেখ হাসিনা দেশে ফেরার কিছুদিন পরই জিয়া চট্টগ্রামে একদল সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন । কিছুদিন পর ক্ষমতা দখল করলেন জিয়ার উত্তরসুরী জেনারেল এরশাদ । তাঁর বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সাথে মিলে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নয় বছর আন্দোলন করেছেন । ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদের পতন হলে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বেগম জিয়ার দল জামায়াতের সাথে আঁতাত করে সরকার গঠন করে। হাল ছাড়েননি শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ তাঁর নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে । এরপর হতে শুরু হয় বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার পালা । যে বাংলাদেশকে জিয়া আর তাঁর স্ত্রী মিলে মিনি পাকিস্তান বানিয়েছিলেন সেই বাংলাদেশকে তিনি আবার পূনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শুরু করলেন। সংবিধান থেকে ইনডেমনিটি বা পনেরই আগস্টের ঘাতকদের নরহত্যার জন্য দায় মুক্তি আইন বাতিল হলো । শুরু হলো বঙ্গবন্ধু আর পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার কাজ । এই দফায় তিনি আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে নিয়েছিলেন আর তা হচ্ছে কৃষি উন্নয়ন । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলার প্রাণ হচ্ছে এই দেশের কৃষক ।
আজ বাংলাদেশ একটি খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ। এই কৃতিত্বের দাবিদার একমাত্র শেখ হাসিনা । পিতার অনেক স্বপ্ন তাঁর হাত ধরেই এখন বাস্তবায়ন হয়েছে । পিতার সময় বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় ছিল দুইশত ডলারের মতো । বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ১৯৪০ ডলারে(অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২০)। যাত্রার সময় দেশটির প্রায় আশি শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করতো এখন তা কুড়ি শতাংশে নেমে এসেছে। যে দেশে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত বিদ্যুত ঘাটতি ছিল একটি মারাত্মক সমস্যা সেই দেশ বর্তমানে প্রায় চব্বিশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে যদিও বিতরণ করতে পারে এগারো হতে বারো হাজার মেগাওয়াট । ৯৯ শতাংশ বাড়িতে এখন বিদ্যুৎ সংযোগ আছে । বেগম জিয়া দুই দফায় সম্পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন । তিনি সর্বোচ্চ তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পেরেছিলেন ।
শেখ হাসিনার জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দেওয়াটা ছিল একটা মাইল ফলক । এই অধিবেশনে বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনে তাক লাগানো অগ্রগতির জন্য শেখ হাসিনাকে দেয়া হয় এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার (ঝউএ চৎড়মৎবংং অধিৎফ) । এই পুরস্কারে যখন তাঁকে ভূষিত করা হচ্ছিল তখন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় বলেছেন ‘রাজমুকুটে আজকের দিনের জন্য তিনি (শেখ হাসিনা) একটি উজ্জ্বল হীরের টুকরা (ঔববিষ রহ ঃযব পৎড়হি ড়ভ ঃযব ফধু) । যে কোন বাঙালিকে বিশ্ব সভায় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এমন একটি অভিধায় পরিচয় করিয়ে দিলে তা গর্বিত করে ।
শুক্রবার নিউ ইয়র্ক সময় বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় তাঁর পূর্ব নির্ধারিত ভাষণ দিলেন । আজ হতে ঠিক সাতচল্লিশ বছর আগে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো এই বিশ্বসভায় এই দেশের পক্ষে তাঁর প্রথম ভাষণটি দিয়েছিলেন বাংলায়। সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বে শান্তি ও ন্যায়নীতির সংগ্রামের কথা বলেছিলেন । তখন ছিল ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আর ভিয়েতনামে চলছিলো মার্কিন আগ্রাসন । আফ্রিকায় তখনো উপনিবেশবাদের শোষণ চলছিল । তিনি দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পরাশক্তিগুলোকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিশ্ব সভায় তিনি শুনিয়ে ছিলেন শান্তির বাণী । ভারত উপমহাদেশে চলমান অশান্তির কথা তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধু ভুলেন নি । তিনি আস্থা রেখেছিলেন জাতিসংঘের উপর বিশ্ব শান্তি ও মানবজাতির অগ্রগতির বৈষম্য দূর করার জন্য । এই সবের জন্য তিনি বিশ্বেরধনী দেশগুলোর দায়িত্বের কথা বলতে ভুলেন নি ।
ঠিক সাতচল্লিশ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা অনেকটা পিতার কথাকেই ভিন্ন ভাবে উপস্থাপনা করেছেন । তিনি জোর দিয়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় দশ লক্ষের বেশী মিয়ানমার হতে উচ্ছেদ হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেই দেশের মানুষের নিজ দেশে সম্মানের সাথে ফেরত যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির কথা । এর আগে তিনি ভিন্ন আর একটি জাতিসংঘের সভায় উপস্থিত হয়ে অনেকটা হতাশার সুরে বলেছেন ‘বিশ্বে অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো এই শরণার্থিদের কথা উঠলে অনেক কথা বলেন কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় না’ । বিশ্বসভার প্রত্যেকটি সভায় তিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার ফলে বিশ্বের দারিদ্রপিড়িত দেশ গুলোর মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনারকথা তুলে ধরেছেন । এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোভিড-১৯ অতিমারি জনিত সমস্যা এবং এই অতিমারি সমাধানের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে টিকা । শেখ হাসিনা বলেছেন এই টিকা নিয়ে টিকা প্রস্তুতকারি দেশগুলোর ভূমিকা হতাশাজনক। যেখানে অনেক দেশে এক শতাংশ মানুষও টিকা পায়নি সেখানে উন্নত বিশ্ব এই টিকা নিয়ে ব্যবসা করতে বেশী আগ্রহী । আফ্রিকার অনেক দেশ যেখানে মানুষ এক ডোজ টিকাও পায়নি সেখানে কোন কোন উন্নত দেশ তৃতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করেছে যা গুরুতর অন্যায় । তিনি বারবার টিকাকে উন্মুক্ত বিশ্ব সম্পদ ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন এবং টিকার উপর আরোপিত মেধাসত্ত্ব আইন তুলে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন । পিতার মতো কন্যাও বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের কথা বলতে ভুলেন নি । এই দিন শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি শুধু বাংলাদেশের জন্যই আশীর্বাদ নন তিনি বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের জন্যও আশীর্বাদ । তাদের হয়ে শুধু বিশ্বসভায়ই নয় তিনি সুযোগ পেলে যে কোন সভায় তাদের কথা বলতে ভুলেন না ।
স্বাধীন বাংলদেশের বয়স পঞ্চাশ পার হয়েছে । এই পঞ্চাশ বছরে একাধিক সামরিক ও বেসামরিক সরকার দেশ শাসন করেছে । কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসন ও শেখ হাসিনার এই দফায় প্রায় তের বছরের শাসন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালজয়ী অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে । যে দেশটির জন্মের সময় তাঁর ভবিষ্যত ছিল অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্নসেই দেশ এখন সারা বিশ্বে একটি বিস্ময়। যে মেয়েটি একদিন ডাক্তার বা স্কুল শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন সেই শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এম্বেসেডার, একজন বিশ্বস্বীকৃত রাষ্ট্রনায়ক । পিতার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে বাংলাদেশকে বিশ্বের অনেক দেশ চিনতো ‘মুজিব কান্ট্রি’ হিসেবে । এখন সেই একই দেশকে আর ভিন্ন ভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এই দেশ এখন সারা বিশ্বে এখন এক নামে পরিচিত । বাংলাদেশের তৈরী পোষাক, বাংলাদেশের ক্রিকেট, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি, বাংলাদেশে নারীর বিস্ময়কর ক্ষমতায়ন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন,কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবেলায় আগাম সতর্কতা ও ব্যবস্থা সব কিছুই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে । বাংলাদেশ যেতো পারতো আরো অনেক দূর কিন্তু পারেনি অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিকতা ও দূর্নীতির করাল থাবার কারণে । এই দুই সর্বনাশা সমস্যার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কøান্তিহীন ভাবে লড়াই করেছেন কিন্তু খুব বেশী দূর অগ্রসর হওয়ার আগেই জীবন দিতে হয়েছে । বঙ্গবন্ধুকে কখনো জনগণ হতে কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারেন নি । কিন্তু এই কথাটি তাঁর কন্যার বেলায় তেমন জোড়ালো ভাবে বলা যাবেনা । তাঁর চার পাশে এক শ্রেণীর আমলা আর তোষামদকারি একটি অদৃশ্য দেয়াল সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন যার ফলে তিনি এখন সহজে জনগণের কথা শুনতে পারেন না । আজকের এই দিনে এটাই শপথ হোক সকল জাল ছিন্ন করে জননেত্রী অবার জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন, শুনবেন তাদের কথা, জানবেন তারা কি চান আর তাঁর চিরাচরিত অভ্যাস মতো তাদের সেই চাহিদা পূরণ করবেন । আবারও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে তাঁর সকল অর্জনের জন্য টুপি খোলা অভিনন্দন । শুভ জন্মদিন জনগণের ‘আপা’ শেখ হাসিনা । আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি । দেশের জন্য জনগণের জন্য আপনি এখনো অপরিহার্য ।

লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ।