শুভ বড়দিন : আঁধার কেটে যাক, আলো ছড়িয়ে পড়–ক

আজ শুভ বড়দিন। বিশ্বের খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশসহ বিশ্বের খ্রীষ্ট সম্প্রদায় নানা বৈচিত্র্যময় আয়োজনের মধ্যদিয়ে এই দিবসটি উদযাপন করবে। দুই হাজার বছর আগে বেথেলহেমের এক জীর্ণ কুটিরে কুমারী মেরীর গর্ভে জন্ম নেন প্রভু যীশু। শান্তি, সম্প্রীতি আর কল্যাণের বার্তা নিয়ে তিনি এসেছিলেন ধরাধামে। সেই বাণী তিনি দিকে দিকে ছড়ালেন। মানুষকে শান্তি ও মানবতার পথে আহ্বান জানাতে, মঙ্গলময় বিশ্ব গড়তে প্রভু যীশু নিজেকে উৎসর্গ করলেন।
মানবতাবিরোধী মূঢ় শক্তি তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে কিন্তু আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেলেন মানুষের কাছে, তা আজ বিশ্বের দিকে দিকে মঙ্গলময় বার্তা রেখে যাচ্ছে। বিশ্ববাসীর কাছে শুভ-কল্যাণ আর মানবপ্রেমের বার্তাবাহক হয়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বরিত হচ্ছেন তিনি প্রতিনিয়ত।
ডিসেম্বর জুড়ে বড়দিন উপলক্ষে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে খ্রীষ্ট সম্প্রদায়। প্রিয়জনদের জন্য থাকে নানা উপহার সামগ্রী। ছোটোদের আনন্দ বেশি। এ সময় ক্রিসমাস ট্রি বানানো হয় উপাসনালয়ে, বাড়িতে। তবে এবার করোনার ভয়াবহ আঘাত গোটা বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে। ইউরোপ আমেরিকায় এর ভয়াবহতা প্রবল আকারে দেখা দিয়েছে। কোডিড-১৯ এর দ্বিতীয়/তৃতীয় ঢেউ চলছে অনেক দেশে। নতুন বিপদ নিয়ে আসছে করোনার নতুন ধরণ বড়দিনের উৎসব উদযাপনে এর প্রভাব প্রতিক্রিয়া পড়বে-এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। মানুষ প্রার্থনায় নত হবে, যাতে বিশ্ববাসী এই মহামারি শীঘ্রই কাটিয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে খ্রীষ্ট সম্প্রদায় যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবসটি উদযাপন করবে, গণমাধ্যমে প্রস্তুতির খবরও আছে। তবে আশা করি, করোনার পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই এবার বড়দিনের উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
প্রভু যীশু মানবজাতিকে শুভ ও কল্যাণ কামনায় উদ্বুদ্ধ হতে শিক্ষা দিয়েছেন। প্রত্যেক ধর্মেই মানবজাতির শান্তি, কল্যাণের বার্তা নিহিত। প্রতিটি ধর্মের মানুষ যদি উদারতা, মানবিকতা ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতার পথ অনুসরণ করে, পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসবে। তবে বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় উগ্রতা, রক্ষণশীলতা, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র শ্রেষ্ঠত্ববাদ বিশ্ব সমাজ ও মানবসভ্যতাকে বিপণœ করে তুলেছে। এসব অনুদার, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক, উদার, সহিষ্ণু সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সাংবিধানিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বর্তমান সরকার সেই মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে সকলের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। বিশ্বের নানা ধর্ম ও সভ্যতা-সংস্কৃতির মধ্যে আজ সংলাপের প্রয়োজন যা মানবিক সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবে। বাংলাদেশের খ্রীষ্ট সম্প্রদায় সংখ্যায় কম হলেও তারা দেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে অবদান রাখছেন। আমাদের দেশে ধর্মীয় উৎসবগুলিতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সানন্দে অংশগ্রহণ করে, আমাদের যুব সমাজের মধ্যে এই ঐক্য, সখ্য ও মিলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে বড়োদের দায়িত্ব রয়েছে।
আমরা মনে করি, সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতা, প্রীতিভাব ও কর্মোদ্যোগ দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে। এ আঁধার সময় দ্রুত অপসৃত হোক, মানবিক আলো ছড়িয়ে পড়–ক সর্বত্র।
শুভ বড়দিন উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের খ্রীষ্ট সম্প্রদায়ের সকলকে জানাই শুভেচ্ছা।