শুধু ভুলত্রুটি নয়, সাফল্যের প্রচারও প্রয়োজন : তথ্যমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশ পরিচালনায় সাফল্যের পাশাপাশি কিছু ভুলত্রুটি থাকে কারণ কোনো সরকার পৃথিবীতে শতভাগ নির্ভুল কাজ করতে পারে না। অতীতেও পারেনি, এখনও পারবে না, ভবিষ্যতেও না। সে কারণেই শুধু ভুলত্রুটি নয়, সাফল্যটাও তুলে ধরতে হয়।’
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বার্তা প্রধান ও সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিরোধীদলের কথা শুনলে তা মনে হয় না। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ওই পারে গিয়ে তারা বলে যে, ‘দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি’। সেই বক্তব্যগুলো আবার সবক’টি টেলিভিশনে ভালোভাবে প্রচার হয়। সবার বক্তব্যই প্রচার হতে পারে, কিন্তু সত্যি ঘটনাটাও প্রচার হতে হবে, তাহলে মানুষ সঠিক উপসংহারে উপনীত হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বার্তা প্রধান ও সম্পাদকবৃন্দ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে মালিকদের কথা শুনতে হয়, কিন্তু প্রতিদিন ‘ডে-টু-ডে অ্যাফেয়ার, আওয়ার-টু-আওয়ার অ্যাফেয়ার’ বার্তা প্রধানরা, সম্পাদকরা করেন। কোন সংবাদটা যাবে বা যাবে না, কতটুকু যাবে, কোন বাইট যাবে, সেটি আপনারাই নির্ধারণ করেন। সুতরাং গণমাধ্যম কি পরিবেশন হচ্ছে সেই নিয়ন্ত্রণটা আপনাদের হাতে। এ জন্যই আপনাদের সাথে আমি বসতে চেয়েছি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রাটাই শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর তার হাত দিয়ে প্রথমে ইটিভি তারপর এটিএন বাংলা, চ্যানেল আইয়ের যাত্রা শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত আমার জানামতে ৩৬টি প্রাইভেট টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে, আরো কয়েকটি খুব সহসা সম্প্রচারে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশে গত ১৪ বছরে বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা এবং অনলাইন সংবাদ পোর্টাল সবকিছুর এক্সপোনেনসিয়াল গ্রোথ হয়েছে এবং মেধাবীরা কাজের সুযোগ পেয়েছেন। প্রাইভেট টেলিভিশন ১০টি থেকে ৩৬টি, দৈনিক কাগজের সংখ্যা সাড়ে ৪শ’ থেকে সাড়ে ১২শ’, হাতেগোনা কয়েকটি থেকে অনলাইন পোর্টাল কত হাজার সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম মানুষের মনন তৈরি করে, মানুষের কাছে সমাজের বিশ্বের চিত্র পরিস্ফুটন করে এবং তা থেকে মানুষ তার ধারণাটা তার নিজের কল্পে সংগ্রহ করে। সে জন্য গণমাধ্যমে কিভাবে সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে টেলিভিশনের দায়িত্ব আমাদের সংস্কৃতিচর্চা এবং সমাজের অনুন্মোচিত বিষয়গুলো উন্মোচন করা। সমাজ যে দিকে তাকায় না রিপোর্টের মাধ্যমে সেগুলোকে তুলে আনা যাতে সমাজ ও সরকার সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। অর্থাৎ মানুষের মনন, দেশ, সমাজ গঠনে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় টিভি চ্যানেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতি, যুদ্ধ ও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে চাঙা রেখেছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির চাকা শুধু সচল আছে তা নয়, আমাদের জিডিপিও বাড়ছে। ২০০৯ সালে আমাদের জিডিপির আকার ছিল ৭৬ কি ৮০ বিলিয়ন ডলার এখন তা পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ছিল ৬শ’ ডলার, এখন ২ হাজার ৮শ’ ৮৪ ডলার, যেটি ভারতকে ছাড়িয়েছে। আর সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য, মানবউন্নয়নসহ সব সূচকে পাকিস্তানকে আমরা ৭-৮ বছর আগে ছাড়িয়েছি। বিশ্বের পত্রপত্রিকা-গণমাধ্যমে আমাদের প্রশংসা হচ্ছে, দেশে সব গণমাধ্যমে তেমনটি নেই।’
নিজ মন্ত্রণালয় সম্পর্কে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর আমি চেষ্টা করেছি গণমাধ্যমকে সুরক্ষা দেওয়া জন্য। দেশের টেলিভিশনের কোনো সিরিয়াল ছিলো না, সেটা আমরা শুরুতেই ঠিক করেছি। বিদেশি টেলিভিশনে অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে পারবো কেউ ভাবেনি, টেলিভিশনের মালিক পক্ষও ভাবেনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে এমনকি ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীকেও জানিয়ে সেটি আমরা কঠোর হস্তে করেছি। ৩০ বছর পর আমি দায়িত্ব নিয়ে সারা ভারতবর্ষে ফ্রি ডিটিএইচ ডিসের মাধ্যমে বিটিভি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের শিল্পীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য টিভি চ্যানেলগুলোতে বিদেশি সিরিয়ালের যথেচ্ছ প্রচার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের ক্ষেত্রে বাড়তি কর দেওয়ার বিধান চালু করেছি।’
সংবাদপত্রে চাকরিরতদের জন্য ওয়েজবোর্ড আছে কিন্তু বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই -এ প্রশ্নে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়েজবোর্ড সংসদে পাশ করা আইন, যা পরিবর্তন করতে হলে আইনটিই পরিবর্তন করতে হবে। সম্প্রচারমাধ্যম সহ গণমাধ্যমকর্মীর আইনি সুরক্ষার জন্য গণমাধ্যমকর্মী আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। এটি পাস হলে তা সুরক্ষা হবে।’