শিশুদের নিয়ে আসছে অভিভাবকরা

বইমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

‘আসলে আমার বাচ্চা মোবাইল স্ক্রিনের প্রতি অনেক বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে। আমি চাইছি ও বই চিনুক। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুক। আমার স্বামী চাকরি করেন। বাসায় ফিরতে রাত হয়। আমাকে পরিবারিক কাজর্কম ও বাচ্চাকে একা সামলাতে হয়। যার কারণে ওদের ব্যস্ত রাখতে বিভিন্ন গান কার্টুন ইত্যাদি মোবাইলে দেখতে দিই। কিন্তু সেটি এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এতে মস্তিষ্ক ও চোখের ক্ষতি হচ্ছে। বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হলে মোবাইলের প্রতি দুর্বলতা কমে আসবে বলে মনে করি’।

বইমেলায় নিজের আড়াই বছরের শিশু সামিয়াকে নিয়ে আসা মা সানজিদা খানম বলছিলেন এ কথাগুলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভিভাবকরা প্রায় সববয়সী শিশুদের সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলায় আসছেন। শিশুদের আগ্রহ অনুযায়ী কিনে দিচ্ছেন বই। কেউবা পরামর্শ দিচ্ছেন কেমন বই চাই। একেবারে কমবয়সী শিশুদের বইয়ের লেখার চাইতে সাথে থাকা ছবির দিকে বেশি ঝোঁক। অভিভাবকরা বলছেন, মোবাইল স্ক্রিনের চেয়ে এ বুঝি ঢের ভালো। বইমেলায় শিশুদের আনাগোনা বাড়াতে সহায়ক হয়েছে শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনীগুলো। এবারে অমর একুশে বইমেলায় অংশ নিয়েছে বেশ কিছু শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনী। এরমধ্যে রয়েছে ঝিলমিল, রং পেন্সিল, গাজী প্রকাশনী, শব্দশিল্প, আদিগন্ত, শিশু প্রকাশনী, সালফি পাবলিকেশন, ফুলকি ইত্যাদি।

প্রকাশনীগুলোর বিক্রিও অন্যদের তুলনায় ভালো। শিশুদের বইয়ের প্রকাশনীগুলোর সংখ্যা এবং বইমেলায় তাদের অংশগ্রহণকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অভিভাবকেরা।

রহমত উল্লাহ নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘আগে কিছু পড়–য়া মানুষই বই খুঁজে নিয়ে নিজ দায়িত্বে পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতো। কিন্তু এখন এতো বড় পরিসরে বইমেলা আয়োজন করার কারণে সব বয়সী মানুষ বইয়ের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। ঘুরতে আসলেও দুটো পাতা উল্টে পাল্টে দেখছেন। আমি চাইছি আমার সন্তান এভাবেই বইয়ের প্রতি ,বই পড়ার প্রতি, কেনার প্রতি আগ্রহী হোক। মুনীর চৌধুরীর পিতা তাঁকে কখনও বইকেনাতে নিরুৎসাহিত করেননি। ১৬তম জন্মদিনে উপহার দিয়েছেন ২৪ খ-ের এনসাইক্লোপিডিয়া। স্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুনীর বইকেনার টাকা চাইলে কখনও না করা যাবেনা। এভাবেই আসলে মুনীর চৌধুরীর মতো সন্তানেরা বেড়ে উঠে।’

ঝিলমিল প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী আনিস সুজন বলেন, ‘আমাদের শিশুতোষ বর্ণ শেখা, শব্দশেখার বইগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া এবারের মেলায় ‘ঝিলমিল জ্ঞানবাক্সো’ বইটির বিশেষ চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের সম্পাদনা পষর্দ বিভিন্ন বয়সী শিশুদের মানসিক গ্রোথ অনুযায়ী গবেষণা করে, আর এসব বই আমরা প্রকাশ করছি। কেবল পড়া নয় লেখা শেখার জন্য আমাদের আছে ‘ঝিলমিল ম্যাজিক হ্যান্ডরাইটিং নোট বুক’। আঁকা ও রং করা শেখার জন্য আমাদের আছে ‘ঝিলমিল কপি টু কালার’।

তাছাড়া যারা পড়া শিখছে, বই পড়ছে তাদের জন্য আমরা এবারে বিদেশি লেখকদের বই অনুবাদ করে প্রকাশ করছি। যেহেতু আমাদের শিশুতোষ মৌলিক বই কম। সবমিলিয়ে আমরা আমাদের প্রকাশনীর বইয়ের চাহিদা নিয়ে সন্তুষ্ট। আমরা চাই আমাদের শিশুরা বইপ্রেমী হয়ে উঠুক।’