শিথিল লকডাউন!

আনোয়ারায় করোনা আক্রান্তের দাফন করা হচ্ছে

আমরা করোনা সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদি একটি চক্রে প্রবেশ করছি : ডা. বেনজির আহমেদ

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া :

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। তার বিপরীতে লকডাউনের কঠোরতা ক্রমান্বয়ে কমছে। এতে দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়ছে। সুতরাং কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ আরো দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমান লকডাউনের সার্বিক অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন পুলিশের সিটিএসবি শাখার উপ-কমিশনার আব্দুর ওয়ারিশের কাছে। তিনি বলেন, আমরা আগে লকডাউন হওয়া ভবনগুলো বা এলাকাগুলোতে আমাদের টিম রাখতাম। এখন আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আগামীতে হয়তো আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে অনুপাতে আমাদের জনবলের সংকট আছে। ফলে আমরা মোবাইল টিমের মাধ্যমে লকডাউন হওয়া এরিয়াগুলো মনিটর করছি।

লকডাউনে আটকে পড়া ভবনের বাসিন্দারা করোনা উপসর্গ নিয়ে ফ্লু কর্ণারে গিয়ে তাদের নমুনা জমা দিচ্ছেন। এতে সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, মূল সমস্যাটা হলো জনবলের সংকট। যদি বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য কোন ব্যবস্থা করা যেত তাহলে তা খুব ভালো হতো। তা শতভাগ সম্ভব হচ্ছে না। এখন আমাদের সব সেক্টরে জনবলের স্বল্পতা আছে। তাই এখন যা হচ্ছে সেটিকে মন্দের ভালো বলতে হয়।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রথম দিকে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম। কিন’ এখন আক্রানত্ম বেড়ে গেছে। আমাদের অতো জনবলও নাই যে বাসায় গিয়ে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে আনবে।

তবে লকডাউন এ আটকে থাকা ব্যক্তিরা নমুনা সংগ্রহের ব্যাপারে সরাসরি আমাদের জানাতে পারেন। অথবা ফ্লু-কর্নারে গিয়ে নমুনা জমা দিতে গেলে পুলিশকে জানিয়ে এবং মাস্ক-গস্নাভস পরে যেতে হবে। এটি নিয়ে আসলে সারাবিশ্বের একি অবস্থা। সবকিছুই যখন প্রতিকূল অবস্থায় চলে যায় তখন আসলে কোন নিয়ম আর চলে না।

সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে লকডাউন শিথিলতা দৃশ্যমান হওয়া প্রসঙ্গে কথা বলা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ৮০ ভাগ জনপদ এখনো করোনা মুক্ত আছে। সেখানে এখনো পর্যনত্ম কোন সংক্রমণ নেই। কিন’ এই সময়ে যদি লকডাউন তুলে ফেলা হয় অথবা শিথিল করা হয় তাহলে সংক্রমণ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। অর্থাৎ যে ২০ ভাগ অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে, সে ২০ ভাগের জনগণ সারাদেশব্যাপী এটি ছড়াবে। ফলে আমরা আরো কঠিনতম ঝুঁকির দিকে পা বাড়াচ্ছি।

আমাদের কি করণীয় হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মানে আমরা করোনা সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদি একটি চক্রে প্রবেশ করছি। তাহলে অন্যান্য দেশগুলো যেখানে তিন মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনছে সেখানে আমাদের তিন বছর সময় লেগে যাবে।

এই শিক্ষাটা আমরা সারা দুনিয়া থেকেই পাই। সংক্রমণের সংখ্যা যখন বাড়ছে তখন আমরা কোনভাবে লকডাউন শিথিল করতে পারিনা। সরকারিভাবে এখন মার্কেট, মসজিদ বা উপাসনালয় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মানে হলো- সংক্রমণ যখন বাড়ছে তখন আমরা জনগণকে জোর করে সংক্রমণের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এটা অদ্ভূত একটা ব্যাপার হয়ে গেল। এটাতো কোনো যুক্তির সাথে মেলে না। আমাদেরকে সংক্রমণের গ্রাফ কমার সাথে সাথে লকডাউন এর শিথিলতার দিকে নজর দিতে হবে। এসময়ে লকডাউন আরো কঠোর করতে হবে।