শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন মশার আখড়া!

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বারান্দাজুড়ে হরেক রকম ফুলের গাছ। উঠানে ও গাছের গোড়ায় চিপসের প্যাকেটের ছড়াছড়ি। বড় বড় আগাছায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে স্কুলের আঙিনা। পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এটি বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর লালখান বাজার, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, কাপাসগোলা, দেওয়ানহাটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্র আরও ভয়াবহ। স্কুলগুলোয় যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ডাবের খোসা, ছোট আইসক্রিমের বক্স, নুডুলস রাখার প্লাস্টিকের পাত্র, ঢাকনা ছাড়া বোতল। সব মিলিয়ে যেন ময়লার ভাগাড়।

নগরীর কাপাসগোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোর্ট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে স্কুলগুলোর চারপাশ জুড়ে ময়লার ভাগাড়।

‘যেখানে সেখানে পড়ে থাকা চিপসের প্যাকেটে বৃষ্টি হলেই পানি জমবে। আর সে পানিতে ৫ থেকে ৭ দিনে জন্ম নিবে শত শত মশা। ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার না করালে স্কুলগুলো মশার আখড়া হয়ে উঠবে।’ এমনটিই জানালেন কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ।

তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারপাশ পরিষ্কার রাখা দরকার। কারণ ছোট ছোট বাচ্চারা এখানে পড়াশোনা করে। তাদের সহজেই কাবু করে ফেলে ডেঙ্গু। তাই যার যার জায়গা থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সবাইকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে।

এখলাছুর রহমান সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের স্কুলের বাচ্চারা এখনো সুস্থ রয়েছে। জ্বর নিয়ে কারো স্কুলে আসার কোনো খবর পাইনি। তবে সারাদেশে ডেঙ্গু বাড়ছে। আমাদের বাচ্চারা বেশির ভাগ নি¤œবিত্ত ঘরের সন্তান। অসুখ হলে তাদের পরিবার খরচ সামলাতে পারবে না। তাই সচেতনতার দরকার রয়েছে। কিন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো নির্দেশনা আমরা পায়নি। পাওয়া গেলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করতে পারতাম’।

এদিকে স্কুলগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতার বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা না পাওয়ায় স্বাস্থ্যবিভাগকেই দুষছেন শিক্ষক অভিভাবকরা। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ডেঙ্গু বাড়ায় গতবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেওয়া হলেও চলতি বছরে কোনো নির্দেশনা পায়নি তারা।

নির্দেশনার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কি করতে হবে। সকলের কি করণীয় তা নিয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি সিটি কর্পোরেশনকে। মহানগরের সব কিছু সিটি কর্পোরেশন দেখভাল করে। নির্দেশনা দিচ্ছে কি দিচ্ছে না এসব তারা জানে। আমরা উপজেলাতে জনসচেতনতা, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।

প্রসঙ্গটি নিয়ে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী জানান, একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার রাখা শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব কর্তব্য। ছোটবেলায় তা আমরা শিখেছি। নিজ দায়িত্বে তারা যদি স্ব জায়গা থেকে এগিয়ে না আসে বলার কিছু থাকে না।

তিনি আরও বলেন, ৪১টি ওর্য়াড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম মহানগর। এত অল্প লোকবল নিয়ে চসিকের একার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বাসা-বাড়ি , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত সবখানে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।