শহরের বাইরে বাড়ছে সংক্রমণ

শীর্ষে ফটিকছড়ি, হাটহাজারীসহ উত্তর চট্টগ্রামের ৪ উপজেলা

মোহাম্মদ কাইয়ুম»

চট্টগ্রামে নগরীর বাইরে উপজেলা পর্যায়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর দিকে গত ১ মার্চ যেখানে নগরীর ৯১ শতাংশ শনাক্তের বিপরীতে উপজেলা পর্যায়ে শনাক্ত ছিল মাত্র ৯ শতাংশ। সেখানে গত ১০ জুন নগরীর ৪৮ শতাংশের বিপরীতে উপজেলায় শনাক্তের হার ছিল ৫২ শতাংশ। নগরীর বিপরীতে উপজেলায় হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে আতংঙ্ক। তবে আতংঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান সিভিল সার্জনের।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে নগরীতে যেখানে শনাক্তের হার ছিল ৭৮ শতাংশ সেদিন উপজেলায় শনাক্তের হার ছিল ২২ শতাংশ। গত ১০ দিনে উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ চিত্রের দিকে থাকালে দেখা যায় ৪০ শতাংশ শনাক্ত ছিল ৫ দিন, ৩০ শতাংশ ছিল ৩ দিন এবং সর্বনিম্ম ২৭ শতাংশ শনাক্ত ছিল মাত্র একদিন। তবে গত ১০ জুন উপজেলায় শনাক্ত বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫২ শতাংশ। এসময়ে উপজেলা পর্যায়ে ফটিকছড়িতে দৈনিক সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ৩৬ জন এবং হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয় ২৩ জন।
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তথ্য মতে, বর্তমানে ফটিকছড়ি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২৫ জনের উপরে করোনা রোগী ভর্তি আছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এরই মধ্যে গত কয়েকদিনে প্রতিদিনই ১৫ থেকে ২০ জন পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে গত এপ্রিলে ফটিকছড়িতে সেখানে দৈনিক ৩ থেকে ৬ জন পর্যন্ত রোগী ভর্তি হতো বর্তমানে সে সংখ্যা ছাড়িয়ে ২৫ জনের উপরে উন্নীত হয়েছে।
ফটিকছড়িতে শনাক্তের হার বৃদ্ধি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাবিল চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে এখানে সংক্রমণ উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। প্রতিদিনই রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ফেব্রুয়ারিতে আমাদের কোভিড ডেটিকেটেড হাসপাতালে করোনা রোগী শূন্যে নেমে আসায় ২৮ ফেব্রুয়ারি সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে বর্তমানে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগী। এরই মধ্যে কয়েকদিনে রেকর্ড পরিমাণ দৈনিক ২৫ জনের উপরে রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া কয়েক দিনে যে পরিমাণ রোগী আসছে তাতে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিতে হবে। যদি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো না যায় তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।’
ভারতীয় ধরন শনাক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এখানে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় ধরন শনাক্তের খবরে আতঙ্ক বেড়ে গেছে। জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি না হলে সংক্রমণ কোনমতেই কমানো সম্ভব হবে না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’
হাটহাজারীতে শনাক্ত বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন সুপ্রভাতকে বলেন, হাটহাজারীতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেশি হওয়াতে শনাক্তের সংখ্যাও অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বেশি থাকে। এছাড়া মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের ভয় চলে যাওয়ায় শনাক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবছর এসময়ে করোনা নিয়ে যে পরিমাণ আতঙ্ক এবং সচেতনতা কাজ করেছিল বর্তমানে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। তবুও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রচারণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে কঠোর হচ্ছি।’
উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে ফটিকছড়িতে সংক্রমণ বেশি। গত দুই-তিন দিনে এখানে সংক্রমণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। শহরের কাছাকাছি হওয়াতে হাটহাজারীতে সংক্রমণ সংক্রমণ বেশি থাকলেও বর্তমানে ফটিকছড়ির পরেই হাটহাজারীতে সংক্রমণের অবস্থান। এছাড়া কয়েকদিন আগে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ বাড়লেও বর্তমানে সেখানে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। এসব উপজেলায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া উপজেলাগুলোতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশাসনের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এখানে আমরা মূলত কন্টাক ট্রেসিং জোরদার করছি। যাদের পজিটিভ হচ্ছে তাদের আত্মীয় স্বজনদের লক্ষণ থাকলে পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করছি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সতর্কতা জোরদার করছি। তবে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই, বরং মাস্ক পরিধান, স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চললে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।’
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে নতুন করে লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমরা আরো এক সপ্তাহ এসব উপজেলায় পর্যবেক্ষণ করবো। যদি সংক্রমণ ব্যাপকভাবে উর্ধ্বগতি হয় তাহলে আমরা ৭ দিনই দেরি করবো না বরং দুই-তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিব। বর্তমানে আমরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নমুনা পরীক্ষাতে জোর দিচ্ছি। যত বেশি নমুনা পরীক্ষা হবে ততই সংক্রমণ সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। এজন্য যাদের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা যায় তাদেরকে অবশ্যই নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে।’