লোভের আগুনে পুড়ে যায় সব

বড় বড় দালান এই শহরের বুক দখল করে চলেছে প্রতিদিনই। প্রথমে ধানখেত কিংবা জলাশয় ভরাট করে আমাদের দেশে লোকালয় গড়ে ওঠে বা আবাসিক এলাকা আমরা গড়ে তুলি।

সর্বগ্রাসী আগুন যখন জিব দেখায়। লোভের আগুনে যখন পুড়ে যায় সব। তখনই মনে হয়, কেন কোনো পুকুর নেই শহরে। লোভ এই শহরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বলা বাহুল্য, পুকুর তো ছিল, আমরা রাখিনি, রাখতে পারিনি। আমাদের ক্ষুধার কাছে হার মেনে নিয়েছে পরিবেশ ও প্রকৃতি।
একটা ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটে গেল বঙ্গবাজারে। হাজার হাজার দোকান সব পুড়ে ছাই। ঠিক রাস্তার উল্টো দিকেই ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ঘাঁটি। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণের সব আধুনিক ব্যবস্থা মজুত করা। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো কই। আশপাশে শহীদুল্লাহ হলের পুকুর ছাড়া আর পানির উৎস নেই। ফলে দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য হেলিকপ্টার দিয়ে হাতিরঝিল থেকে পানি এনে ছিটাতে হয়েছে।
শহরে ভয়াবহ আগুন লাগলে ফায়ার ব্রিগেড পৌঁছে কোথাও পানির উৎস খুঁজে পায় না। মনে করা হয় শহরজুড়ে বুঝি পানি আছে, আসলে কিন্তু নেই। পুকুর নেই, খাল নেই, কোথাও কোথাও ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ঢোকার রাস্তা নেই। কাছাকাছি কোথাও পানির সহজলভ্য উৎস না পেয়ে আগুন নেভাতে সময় লেগে যায় ফায়ার সার্ভিসের।
আমাদের কিছু আইন আছে জলাধার রক্ষায়। কিন্তু সেগুলো আমরা কেউ মানি না। তাই একের পর এক এসব জলাশয় ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে আবাসন। এখন প্রতিবছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে আর ডুবে যাচ্ছে শহর। পানি ধারণ করার মতো জলাশয় নেই বলে। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল বা স্বাধীন বাংলাদেশেও শহরে যে পুকুরের অস্তিত্ব ছিল, সেসব পুকুরের অর্ধেক থাকলেও এখন এত জলাবদ্ধতা হতো না। নগরবাসীর সুবিধার জন্য এসব পুকুর সংরক্ষণ করা বা টিকিয়ে রাখা দরকার ছিল।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যে ২৫ শতাংশ জলাশয় থাকা প্রয়োজন, সেটা যেন আমরা এখন আর মনেই করতে চাই না। কিন্তু আমরা যদি এটা ভুলে যাই, তাহলে বিপদ আমাদেরই। তাই এখনো শহরে যেসব পুকুর, খাল টিকে আছে, সেগুলো বাঁচাতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।