লোকাল গাড়িতে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া

দক্ষিণ চট্টগ্রামে ঈদযাত্রা

dav

রাজিব শর্মা »

ঈদের ছুটি শুরু হতেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রবেশমুখ শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। এর মধ্যে নির্বিঘেœ ঈদযাত্রার সুবিধার্থে দূরপাল্লার পরিবহন নানা সুবিধা রাখলেও পিএবি ও আরাকান রোডের লোকাল গাড়িগুলো ‘বখশিসের’ নামে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। গত কয়েকদিন ধরে বাসে ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তির হলেও আজ বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ঈদে যানজট নিরসনে নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। বাড়ি ফিরতে যাতে কোন ভোগান্তির সৃষ্টি না হয় এবং যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি জনবলও বাড়িয়েছে সিএমপি।

সিএমপির ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) এনএম নাসিরুদ্দিন বলেন, পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে শহরের যানজট নিরসন ও নিরাপদে ঈদ উদযাপনে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রাখা হয়। যার মধ্যে অস্থায়ী বা মৌসুমী বাস কাউন্টার না বসানো, জরাজীর্ণ ও লক্কর-ঝক্কর গাড়ি রাস্তায় নামানো বন্ধ করা, সড়কে চলাচলকারী গাড়িতে অবশ্যই ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করা, এক রুটের গাড়ি অন্য রুটে চলাচল করতে না দেয়া, ঈদকে টার্গেট করে যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।

কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দেখা গেছে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত ২২ টাকা ভাড়ার স্থলে আদায় করা হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, পটিয়া স্টেশন পর্যন্ত ৫৯ টাকার পরিবর্তে আদায় করা হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, কেরানীহাট পর্যন্ত ১৪৫ টাকার স্থলে আদায় করা হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, নতুন ব্রিজ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৪২০ টাকা, এছাড়া নতুন ব্রিজ থেকে লোহাগাড়া (আমিরাবাদ) পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। অথচ ভাড়া আরও অনেক কম হওয়ার কথা। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার থেকে আরো ভাড়া বাড়তে পারে মনে করছে যাত্রীরা।

সূত্র জানায়, গতকাল বিকালে নগরীর কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ এলাকার দক্ষিণ থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের চাপে আধ ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে সন্ধ্যার পর থেকে পিএবি সড়কের আনোয়ারা, বাঁশখালী রোডের বাস ও সিএনজিচালিত ট্যাক্সিগুলো ঈদ বখশিসের নামে ভাড়া বাড়তি নেওয়া শুরু করেছে।  যদিও বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।

পিএবি রোডের শাহ আমানত ব্রিজ এলাকা থেকে বাঁশখালিতে ঈদে বাড়ি ফেরা মো. জসিম বলেন, আমরা নিয়মিত বাসে যায় ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কিন্তু এখন বাঁশখালী স্পেশাল বাসগুলো ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। অথচ তারা আপনাদের বলছে ভাড়া বাড়ায়নি।

এদিকে পিএবি রোডের আনোয়ারার বাস ও সিএনজিচালিত ট্যাক্সিগুলোও ঈদ বখশিসের নামে ভাড়া বাড়তি নিচ্ছে বলে একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন। যদিও যাত্রীদের এসব অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করেন পিএবি সড়ক যানবাহন মালিক সমিতির সভাপতি ভিপি মো. জাফর উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, যদি কেউ ভাড়া বাড়তি নেয় তাহলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

অন্যদিকে আরাকান রোডে ভাড়ায় অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জহির উদ্দিনকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে নির্বিঘেœ ও নিরাপদে যাত্রীদের ঈদযাত্রার জন্য দূরপাল্লার বাস মালিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবার ৪২০ টাকা ভাড়ার চেয়ে ২০ থেকে ৭০ টাকা কম রাখবেন বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বাস মালিক।

পূরবী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার হুমায়ূন কবির বলেন, ছুটির প্রথম দিন বাসে করে বাড়িমুখী ঈদ যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল। বৃহস্পতি ও শুক্রবার যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে । এ ছাড়া এ বছর ঈদের ছুটি একদিন বাড়তি থাকায় বাড়ি ফেরা নিয়ে যাত্রীদের তাড়াহুড়ো তেমন দেখছি না। তবে এবার আমরা কক্সবাজারের যাত্রীদের ৪২০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা করে রাখছি।

হানিফ পরিবহনের চিফ ইন ইনচার্জ বলেন, এবার ঈদে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের ঈদে বাড়ি ফিরতে আমাদের পর্যাপ্ত টিকেট রয়েছে। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে আমরা কক্সবাজারের যাত্রীদের প্রতি টিকেটে ৭০ টাকা কম রেখে ৩৫০ টাকা করে নিচ্ছি।

সোদিয়া পরিবহনের নতুন ব্রিজ কাউন্টার অফিসের ইনচার্জ মো. ইকবাল বলেন, এবার ঈদযাত্রায় যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি ফিরতে আমরা পর্যাপ্ত টিকেট রেখেছি। কোন ধরনের সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।