রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামছে না

ফের গুলিতে দুজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসী কর্মকা- থেমে নেই। এমন কোন দিন নেই শরণার্থী শিবিরে চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটছে না। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারি, অভিযান কোন কিছুই যেন তাদের দমাতে পারছে না। এখন রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা শুধু ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তারা ক্যাম্পের বাইরেও নানা অপরাধ ঘটাচ্ছে।

গতকাল সোমবার (৯ অক্টোবর) ভোরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের গুলিতে উখিয়ার ২ ও ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক ঘটনায় দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত দুই রোহিঙ্গা হলেন ২ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা ছানা উল্লাহ (২৭) ও ৭ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা আহম্মদ হোসেন (৩৬)।

এ বিষয়ে ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গভীর রাতে ৭ নম্বর ক্যাম্পে ১৫-১৬ জন সন্ত্রাসী একটি চায়ের দোকানে গুলি চালায়। এতে আহম্মদ হোসেন নিহত হন। অপরদিকে ভোরে ২ নম্বর ক্যাম্পে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী মাহমুদুল হকের বসতঘরের সামনে গুলি করে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলে ছানা উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

ওসি আরও বলেন, এক ঘণ্টার ব্যবধানে এ গুলির ঘটনা ঘটে। নিহত দুজনের বুক, পেট এবং কোমরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৫) নামে এক সাব মাঝিকে (কমিউনিটি নেতা) কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।

অপরদিকে, ১৫ সেপ্টেম্বর ভোরে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-২ ব্লকের ২ নম্বর পাহাড়ের সামনে খেলার মাঠে শিবিরে ‘আধিপত্য বিস্তারকে’ কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই আরসা সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

এছাড়া, ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে উখিয়ার ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পানি চলাচলের নালা থেকে এক রোহিঙ্গা যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

থেমে নেই অভিযান
নানা অপরাধ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টহলের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি। এছাড়াও পরিচালনা করা হচ্ছে যৌথ অভিযান। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকা থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গান কমান্ডার মো. রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছাকে আটক করেছে র‌্যাব। এ সময় দুই বাংলাদেশিসহ আরও তিন সহযোগীকে আটক করা হয়।

অপরদিকে, ২ অক্টোবর ভোরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আরসার প্রধান আতাউল্লাহর একান্ত সহকারী এবং অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ ওরফে নোমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সীমান্তবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরসার সন্ত্রাসীদের ধরতে যৌথ অভিযানের সময় গোলাগুলিতে একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী নিহত হন। এ ঘটনায় নোমান জড়িত। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আরসার জন্য পাঠানো অর্থের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে এবং প্রাপ্ত অর্থ আরসার বিভিন্ন ক্যাম্প কমান্ডারদের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে স্বীকার করেন নোমান। এর আগেও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) শীর্ষ সন্ত্রাসী আসামি হাফেজ নুর মোহাম্মদ, রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছাসহ ৬০ জন আরসা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে র‌্যাব।

নিরাপদে থাকতে চান সাধারণ রোহিঙ্গারা
সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবি, স্বদেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পে নিরাপদে থাকতে চান তারা। জামতলী ক্যাম্প ডি ২’র বাসিন্দা হাকিম বলেন, ক্যাম্পে যে খুনোখুনি, গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলে- এগুলো আমরা চাই না। ক্যাম্পে এসব অস্থিরতা বন্ধ হোক।

আরেক রোহিঙ্গা আবদুর রহমান বলেন, ক্যাম্পকে নিরাপদ করতে প্রশাসন সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করুক, এটা আমাদের দাবি।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, যৌথ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীরা আইনের আওতায় আসলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে স্বস্তি ফিরবে। এছাড়া রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।