যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে শিগগিরই

স্মরণকালের মধ্যে বড় মানবিক বিপর্যয়ে পতিত হয়েছে গাজার ফিলিস্তিনিরা। বেসামরিক এলাকায় বিমান হামলার মধ্যে এবার গাজার একটি হাসপাতালে বিমান হামলায় অন্তত পাঁচশো মানুষ নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য দপ্তরের মুখপাত্র জানিয়েছে। গাজার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ব্যাপটিস্ট হসপিটালে এই বিমান হামলা হয়েছে। বিবিসির সংবাদদাতা টম বেটম্যান জানিয়েছেন, চার দিকে রক্তাক্ত, নিস্তব্ধ মানুষগুলো পড়ে আছেন। বিদ্যুৎ নেই, তাই অন্ধকারের মধ্যেই তাদের স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকটে রয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালের মেঝেতে রোগীদের অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে, বেশিরভাগ সময় কোনও চেতনানাশক ছাড়াই। ইসরায়েলের বোমা বর্ষণ ও অবরোধ জারি থাকায় এমনিতেই গাজায় চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি ছিল। হামলায় বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাহত হওয়ায় পরিস্থিতি একেবারে নাজুক হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র যখন গাজা উপত্যকায় জরুরি ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে তখন এই নৃশংস হামলা হলো। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলি সর্বাত্মক অবরোধের মুখে রয়েছে ছিটমহলটি। হাজার হাজার মানুষ খাবার ও পানির খোঁজ করছেন হন্য হয়ে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত কয়েক দিনের হামলায় গাজায় অন্তত ৩ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন, আহতের সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি। ধারণা করা হচ্ছে গাজার বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা রয়েছে অন্তত আরও ১হাজার ২০০ জন। তারা জীবিত বা মৃত হতে পারে।
এ এক ভয়াবহ দৃশ্য। বিশেষ করে ধ্বংসস্তূপ থেকে যখন আহত-নিহতদের উদ্ধার করা হয় তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এত এত বেসামরিক মানুষ হত্যার নজিরও খুব বেশি নেই কিন্তু এই হত্যালীলা থামাবার কার্যকর উদ্যোগও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০। হামলার সময় হামাস যোদ্ধারা প্রায় ২০০জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলার জবাবে প্রতিদিন রকেট ছুড়ছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামীরা।
বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে সে দেশে জরুরিভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সে সঙ্গে তিনি যুদ্ধ-সংঘাত আর অস্ত্রের খেলায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শিশুরাও যে রক্তাক্ত হচ্ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ফের সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে বিশ্বের শিশুদের খাবার ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় করুন। যুদ্ধ, অস্ত্র মানুষের মঙ্গল আনে না। তিনি বলেন, সবচেয়ে কষ্ট পায় নারীরা, আর যুবকরা দেয় জীবন। সন্তানহারা পিতা মাতা, পিতা মাতা হারা সন্তান। তাদের কী যে বেদনা, সেটা আমরা জানি।’
এ এক অদ্ভুত রক্তের নেশা যেন পেয়ে বসেছে যুদ্ধবাজদের। মানুষকে মারার জন্য তারা যত না সক্রিয় বাঁচিয়ে রাখতে ততটা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, যুদ্ধ ও অস্ত্র মানুষের কল্যাণ আনে না। যদি আনতো তাহলে ফিলিস্তিনে এত রক্তের বন্যা বইতো না। এত মৃত্যু, এত রক্তপাত দেখেও কি বিশ্বনেতাদের হৃদয় গলছে না। কিন্তু উদোগ তো নিতে হবে। মানুষকে তো বাঁচাতে হবে।