যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের বিচারক হয়ে নুসরাত চৌধুরীর ‘ইতিহাস’

সুপ্রভাত ডেস্ক »

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের বিচারক হিসেবে সেনেটের অনুমোদন পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত চৌধুরী। দীর্ঘ পথপরিক্রমা শেষে বৃহস্পতিবার সেনেটে ভোটাভুটিতে নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক হিসেবে তাকে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন হয়। খবর বিডিনিউজের।

সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার সেই খবর জানিয়ে এক টুইটে লেখেন, ‘প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান এবং প্রথম মুসলিম আমেরিকান নারী হিসেবে ফেডারেল বিচারক হয়ে তিনি (নুসরাত) ইতিহাস গড়েছেন।

‘তিনি আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের একজন লিগ্যাল ডিরেক্টর। তার নাম সুপারিশ করতে পেরে আমি গর্বিত।’

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বিচারক হিসেবে নুসরাতের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছর। সেনেট নেতা শুমারের সুপারিশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেন।

পরে ওই বছরের ২৭ এপ্রিল সেই প্রস্তাব সেনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে যায়। সেখানে ১২-১০ ভোটে তা নাকচ হয়ে যায় ২৬ মে। এরপর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি নুসরাতের মনোনয়ন প্রেসিডেন্ট বরাবর ফেরত গেলে সেনেট আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুনরায় তাকে মনোনয়ন দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে সেনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে ফের ভোট হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেদিনও ১১-১০ ভোটে নুসরাতকে নিয়োগের প্রস্তাব নাকচ হয়।

পরে বিশেষ বিধিবলে ১৪ জুন ওই নিয়োগ প্রস্তাবের ওপর সেনেটের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভোটাভুটি হয়। সেখানে ৪৯-৫০ ভোটে বাদ পড়ে মনোনয়ন প্রস্তাব। রিপাবলিকান সেনেটের জো ম্যানশিন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন।

কিন্তু পরদিন ম্যানশিন মত পরিবর্তন করে মনোনয়নের পক্ষে অবস্থান নিলে ৫০-৪৯ ভোটে নুসরাতকে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন পায়।

দীর্ঘ পথ পেরিয়ে নুসরাতের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সেনেটের নেতা চাক শুমার।

তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে মিসেস চৌধুরীর বুদ্ধিমত্তা এবং একজন প্রতিভাবান-নিবেদিত আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘদিনের প্রজ্ঞা তার কাজে সহায়ক হবে। তিনি বাস্তবতার আলোকে প্রকৃত সত্য অনুসরণ করবেন এবং বিদ্যমান আইনের আওতায় ন্যায়বিচার পরিচালনা করবেন। ‘নুসরাত চৌধুরী আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের আইনি পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্টা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করেছেন। নাগরিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থেকে বিগত দিনে বেশ কিছু মামলা পরিচালনায় অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তাই নিউ ইয়র্ক ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের বিচারক হিসেবে নুসরাতের ভূমিকা সকলের প্রত্যাশার পরিপূরক হবে, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তার এ নিয়োগে আমি গর্ববোধ করছি।’

শুমার বলেন, নুসরাতের বাবা ৪০ বছর আগে থেকে শিকাগোতে থাকছেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ‘ফুলব্রাইট স্কলারশিপ’ নিয়ে। তার আমেরিকান স্বপ্ন-সারথী হিসেবে নুসরাত গ্র্যাজুয়েশন করেন কলাম্বিয়া, প্রিন্সটন এবং ইয়েল ল স্কুল থেকে। এরপর কর্মজীবনে তিনি ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন।

‘সে আলোকে আমি আশা করছি, বিচারের কাঠগড়ায় আসা কেউ হতাশ হবেন না।’

নুসরাত চৌধুরী ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনে সিভিল রাইটস এবং সোস্যাল জাস্টিস সেকশনের সদস্য ছিলেন। প্রেসিডেন্সিয়াল টাস্কফোর্সের সদস্য ও শিকাগো অঞ্চলে এশিয়ান-আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনেরও সদস্য ছিলেন। শিকাগোর দক্ষিণ এশিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।