মাদ্রাসায় ছাত্রের গলাকাটা লাশ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপে একটি মাদ্রাসা থেকে ৭ বছর বয়সী এক ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মো. ইফতেকার মালিকুল মাশফি (৭) নামের ওই শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
মাশফি চরণদ্বীপ ইউনিয়নের মধ্যম চরণদ্বীপ ফকিরাখালি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমিরাত প্রবাসী আব্দুল মালেকের ছেলে।
চরণদ্বীপ দরবার শরীফ পরিচালিত ‘আল্লামা শাহসূফী অছিয়র রহমান (ক.) মাদ্রাসা, হেফজখানা ও এতিখানার’ কায়দা শ্রেণির ছাত্র ছিল মাশফি।
বোয়ালখালী থানার ওসি আবদুল করিম জানান, তারা খবর পেয়ে সাড়ে ৯টার দিকে হেফজখানার দ্বিতীয় তলা থেকে মাশফির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেন।
কী কারণে কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফজখানার তিন শিক্ষককে থানায় নেওয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফজারুল হক টুটুল।
দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী মৃত্যুর খবরে দরবার শরিফ এলাকায় স্থানীয়দের বেশ ভিড়।
তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, এই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয় এবং ওই কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের মাদ্রাসা থেকে নিয়ে গেছেন।
শিক্ষার্থী মৃত্যুর খবরে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ওই এলাকায়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও গেছেন সেখানে।
সাইদুল ইসলাম শামীম ও আহমদ উল্লাহ মুন্না নামে হেফজ শাখার দুই ছাত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই তলা বিশিষ্ট হেফজ খানার নিচ তলায় তারা কায়দা, আমপারা ও হেফজ শাখার প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকে।
তাদের সাথে থাকেন হাফেজ জাফর আহমেদ ও হাফেজ মো. রুস্তম আলী নামে দুই শিক্ষক।
দুই তলা বিশিষ্ট এ হেফজখানার নিচ তলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও থাকার রুম। আর দ্বিতীয় তলায় তাদের মালামাল রাখা হয়।
দুই শিক্ষার্থী জানান, প্রতিদিনের মতো শনিবারও ভোরে নামাজ পড়ে তারা ক্লাস শুরু করেন। এসময় ক্লাসে পাঠ দান করছিলেন হাফেজ জাফর আহমেদ, রুস্তম আলী ছিলেন বাইরে।
তারা বলেন, সকাল ৭টার দিকে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে মাশফি জাফর আহমেদের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ক্লাসের বাইরে যান। পরে তাকে খোঁজাখুঁজি করে কোনো স্থানে না পেয়ে দ্বিতীয় তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় মাশফিকে পায়।
মাশফির বড় ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল সাজেদ জানান, সকাল পৌনে ৮টার দিকে মাদ্রাসা থেকে তাকে ফোন করে মাশফিকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানানো হয়।
তিনি বলেন, ‘এসময় আমি মাদ্রাসার কাছে আমার দুই বন্ধুকে ফোন করে ভাইয়ের খোঁজ নিতে বলি। তার এসে দ্বিতীয় তলায় থেকে কম্বল ও বিভিন্ন ধরনের কাপড় চাপা দেয়া অবস্থায় মাশফির গলাকাটা লাশ দেখতে পায়।’
মাশফিকে খুঁজতে আসা তার বড় ভাইয়ের দুই বন্ধু হাবিবুল হাসান ও জুনায়েদ আলম সায়েম জানান, সোয়া ৮টার দিকে মাশফির বড় ভাই মাজেদের ফোন পেয়ে মাদ্রাসায় আসেন এবং প্রথমে মাদ্রাসার আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে খোঁজেন, না পেয়ে মাদ্রাসায় ঢোকেন।
এসময় তারা গিয়ে হেফজখানার সিঁড়ির কাছে এক শিক্ষককে দেখতে পেয়ে মাশফির খোঁজ করেন। এসময় তিনি তাদের আজান দেওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানান নিহতের বড় ভাইয়ের দুই বন্ধু।
সায়েম বলেন, ‘এসময় আমরা দুই বন্ধু এবং মাশফির মামাও খুঁজতে আসে তাকে। হেফজখানার শিক্ষার্থীরাও তাকে খোঁজ নিতে থাকেন। আযান দেয়ার পর’ দ্বিতীয় তলায় খুঁজতে থাকা দুই শিক্ষার্থী কম্বলসহ চাপা দিয়ে রাখা অবস্থায় মাশফির পা দেখে চিৎকার শুরু করে। তখন আমরা গিয়ে কম্বল তুলে মাশফির লাশ দেখতে পাই।’
তিনি জানান, মাশফির মুখ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রাখা ছিল। তার উপর আরও কিছু কম্বল ব্যানারসহ বিভিন্ন কাপড় দিয়ে রাখা হয়।
চরণদ্বীপ শাহী দরবার শরীফের ভেতরে মাদ্রাসা, হেফজখানা ও এতিমখানা, মাজার শরিফ ও একটি ইসলামী একাডেমি রয়েছে। শাহসূফী অছিয়র রহমানের বংশধররা এগুলোর দেখাশোনা করে।
বর্তমানে মাজারের প্রধান খাদেম শেখ আবু মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ফারুকী জানান, ২০০৮ সালে দরবার শরিফে হেফজখানা ও মাদ্রাসা কার্যক্রম শুরু হয়। হেফজ খানায় ৪২ জন শিক্ষার্থী আছে। আর তাদের দায়িত্বে আছেন দুই শিক্ষক জাফর আহমেদ ও রুস্তম আলী।
এছাড়া একাডেমির জন্য সম্প্রতি শাহাদাত হোসেন নামে আরও এক শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
তিন শিক্ষককেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছেন বলেও জানান খাদেম শহীদুল্লাহ ফারুকী।
সেখানে এই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আশা করি, পুলিশ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করবে।’ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শাস্তিও দাবি করেন তিনি।