‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অভিযোগ অস্বীকার মোছলেম উদ্দিনের

‘অভিযোগের নেপথ্যে গভীর যড়যন্ত্র’

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন চট্টগ্রাম জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কামাল উদ্দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের অপপ্রচার এবং এসবের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাংসদ মোছলেম উদ্দিন। রাজনৈতিকভাবে তার ক্ষতি করতে পেছন থেকে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে- এমন দাবি করেছেন এই সাংসদ।
গতকাল দুপুরে প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু কার্যপরিধি আছে, যা জনসম্মুখে প্রকাশ করা যায় না। কেন্দ্রীয় নেতারা মনোনয়নের বিষয়টা দেখেন। আমাদের এতে কোন হাত নেই। আমরা শুধু তালিকা পাঠাই। এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে সভা করেছি, সেখানে যারা প্রার্থী তারা বক্তব্য রেখেছেন। তারা সেখানে বলেছেন- মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আমাদের মনোনয়ন দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। তাই আমাদের কারো পক্ষের হয়ে পছন্দ করে মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ নেই।
তবে সাম্প্রতিক একটি ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে। ফেসবুকে কামাল উদ্দিন নামে যে লোক আমার নাম লিখে পোস্ট দিয়েছেন, তিনি গত মঙ্গলবার আবার ফেসবুকে আমার প্রশংসা করেছে। আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। তার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই বরং আমি তার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছি। তাকে কেউ পেছন থেকে হয়তো ইন্ধন দিয়েছে। তিনি ফেসবুকে না দিয়ে বিষয়টি কেন্দ্রেও যোগাযোগ করতে পারতেন। তবে এটা সত্য যে ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবুও আমার কোন অন্যায় হয়ে থাকলে এবং তা প্রমাণ করতে পারলে আমি যে কোনও ধরনের শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি। তাই আমি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ ভূমিকা কামনা করব।’
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে সমালোচনা সহ্য করতে হয়। কিন্তু আমি তো ভূমিদস্যুতা করিনি, সন্ত্রাস করিনি। কারো মায়ের বুক খালি করিনি। আমি মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনও অন্যায়ের সাথে আপস করিনি। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে আমার নাম ব্যবহার করে যে ব্যক্তি টাকা নিয়েছে উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে এতে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন্ন হয়েছে। গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে আমি হতাশ হয়েছি।
সাংসদ মোছলেম উদ্দিনের কাছে সাতকানিয়ার রাজাকার মুমিনুল হক চৌধুরীর ছেলে রুহুল্লাহ চৌধুরীর মনোনয়নের ব্যাপারে প্রশ্নে করা হলে তিনি বলেন, আমরা তার নাম পাঠাইনি। কেন্দ্র থেকে অনেকে সরাসরি ফরম নেন। তাকে হয়তো সেখান থেকে যুক্ত করা হয়েছে। জামায়াতের সাথে রুহুল্লার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে দলীয় সভানেত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে সাতকানিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
উল্লেখ্য, সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে গত সোমবার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি কামাল তার ফেসবুকে সাতকানিয়া সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের জন্য ১৫ লাখ টাকার চেক নিয়েছেন অভিযোগ করে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। তিনি চেক ও টাকা ফেরত চান। এই পোস্ট দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ।