ভোটের প্রচার প্রলম্বিত অপেক্ষা আর ফুরায় না

সিসিসি

সুপ্রভাত ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারী কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে প্রচার চালানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের সামনে, কিন্তু দীর্ঘ এই প্রতীক্ষায় কর্মীদের আ গ্রহ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়- যে অনুষ্ঠান যখন আসছে, সেখানে নিয়মিতভাবে অংশ নিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা, অনানুষ্ঠানিক প্রচারে ভোট প্রার্থনাও চলছে। এদিকে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন, আসছে নভেম্বরের শেষ দিকে বা ডিসেম্বরেই হয়ত সিটি করপোরেশনের স্থগিত থাকা নির্বাচনের তারিখ পড়বে। আর সেই গুঞ্জনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠানে উপস্থিতিও সপ্তাহখানেক ধরে বেড়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোট গ্রহণ স্থগিত হওয়ায় এমন ধরনের প্রচার নিয়ে তাদের কোনো বিধি নিষেধ নেই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ মার্চ। সেজন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় মাত্র সপ্তাহখানেক আগে নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করে। এরপর পেরিয়ে গেছে সাত মাস। এর মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে কয়েকটি উপ নির্বাচনে মহামারীর মধ্যেই উপ নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকারের আওতায় বলে চট্টগ্রামের নির্বাচন নিয়ে কমিশনের সেই তাড়া নেই। এত দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচনের প্রতীক্ষায় থেকে জনসংযোগ করতে হওয়ায় কিছু প্রার্থী নিষ্ক্রিয়ও হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘করোনার আতঙ্ক এখন কমে এসেছে। মানুষ অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরেছে। বিভিন্ন স্থানে ভোট হচ্ছে। এখন ভোট গ্রহণের জন্য উপযুক্ত ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি আছে বলে আমি মনে করি।
‘আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস ধরে করোনায় খাবার বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবার জন্য আইসোলেশন সেন্টার করা, সুরক্ষা সাম গ্রী দেয়াসহ মানুষের দুর্দিনে পাশে আছি এবং থাকব।’ রেজাউল করিম চৌধুরী এখন দৈনিক চার থেকে ছয়টি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের এসব অনুষ্ঠানে তিনি নৌকায় ভোট চাইছেন। পিছিয়ে নেই বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনও। ১০ অক্টোবর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নগর বিএনপির নেতাদের স্কাইপে মিটিং এর পর থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানায় তার সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতি পেয়েছে।
নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত বলেন, ‘নিয়মিত আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত যেহেতু নিয়েছি, আমরা মাঠে আছি।’ আর নির্বাচনের সময় নিয়ে তার ভাষ্য: “করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে শীতে। তাই এই সময়ে ভোট হলে ভোটাররা কতটা কেন্দ্রমুখী হবেন, সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে।’ চট্টগ্রাম সিটির এই নির্বাচন বিভিন্ন কারণে সরকারের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে মনে করেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী।
‘চট্টগ্রাম বন্দর নগরী ও অর্থনৈতিক নগরী। জাতীয় বা উপ-নির্বাচনের মত আগের রাতে ভোট বা ভোট ডাকাতির কালচারে গেলে সরকার আর গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে পারবে না। সরকারকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। উৎসবের আমেজ ফেরাতে হবে।’ ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ‘পদক্ষেপ নিতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন শাহাদাত। ‘আগে থেকে ঘোষণা দিলে অক্টোবরে ভোট নেওয়া যেত। প্রশাসকের মেয়াদ পূরণের চিন্তা থাকায় সেটা করেনি। এখন করলে করোনার সংক্রমণের দিকে নজর রেখে করতে হবে। সেকেন্ড ওয়েভ যদি আসে, তাহলে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে না, সেটা মাথায় রাখতে হবে।’
এদিকে সদ্য সাবেক কাউন্সিলর এবং আসন্ন নির্বাচনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় এলাকায় দৈনন্দিন সেবা কার্যক্রম সমন্বয়হীন হয়ে পড়েছে। আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জহর লাল হাজারী বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে অনেক বিচার-আচার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন কাজে মানুষ আমাদের ডাকে। কিন্তু সেসবে আমরা এখন আগের মত অংশ নিতে পারছি না। ‘তবু মানুষ ডাকলে যেতে হয়। চলমান করোনায়, গত রোজায় এবং আসন্ন পূজায় যতটুকু পারছি এলাকাবাসীর পাশে থাকছি। এখন ভোটের নির্দিষ্ট সময়সীমা জানা গেলে পরিকল্পনা করে প্রচার করা যেত। সাত মাস ধরে ভোট না হওয়ায় অনেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন।’
নগরীর ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ও নগর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন কায়সার লাভলুর অভিযোগ ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। কিন্তু মাঠে আমাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। একটি প্রস্তুতি সভার আয়োজন করেছিলাম, অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। পরে দলীয় কার্যালয়ে করতে হয়েছে। এর বাইরে পুরনো গায়েবি মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এসব নির্বাচন ঘিরে হয়রানি। গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোট করছি। রাতের ভোট হলে নির্বাচনে থাকব কি করে?’
নগরীর ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. সালাউদ্দিন বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে ওয়ার্ড সচিব দিয়ে কাউন্সিলর কার্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধির শূন্যতা এতে পূরণ হওয়ার নয়। ‘বিপদে আপদে মানুষের পাশে আছি। পাঁচ হাজার মানুষকে করোনায় খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যেখানে জনসমাগম হয় সেখানে যাই, স্থানীয়দের সমস্যা সুবিধার কথা শুনি। সমাধানের চেষ্টা করি। আমাদের চাওয়া দ্রুত যেন নির্বাচন হয়।’ এভাবে প্রার্থীদের প্রচার নিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানকে প্রশ্ন করেছিল। উত্তরে তিনি বলেন, প্রার্থীরা রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত। যেহেতু তফসিল স্থগিত হয়েছে, তাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে তারা ভোটের কথা বলতে পারেন, আইনগত কোনো ব্যবস্থা এখানে নেওয়া যায় না।’ আর ভোটের সম্ভাব্য তারিখ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগে জানানো হয়েছে প্রস্তুতি নিতে। সুবিধাজনক সময়ে ভোট গ্রহণ হবে।’ নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর গত ৫ অগাস্ট মেয়াদ পূর্ণ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিগত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং কাউন্সিলরসহ পুরো পরিষদ। তার আগেরদিন ৪ আগস্ট সরকার সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে নগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে দায়িত্ব দেয়। নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাস তিনি ওই পদে থাকতে পারবেন।