ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি

বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে

ভেনামি চিংড়ি। যার বৈজ্ঞানিক নাম লিটোপেনিয়াস ভেনামি। পেনাইডি পরিবারের একটি উচ্চফলনশীল চিংড়ি। এটি প্রশান্ত সাগরের সাদা চিংড়ি, চিংড়ির রাজা ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে এটি সাদা সোনা হিসেবে পরিচিত।
এ চিংড়ি সর্বোচ্চ ২৩ সে.মি. বা ৯.১ ইঞ্চি লম্বা হয়। অন্য সকল চিংড়ির চেয়ে এ চিংড়ির উৎপাদন বেশি। দেখা গেছে হেক্টর প্রতি এ চিংড়ির উৎপাদন সাত হাজার কেজির বেশি। যা বাগদার তুলনায় হেক্টর প্রতি প্রায় ছয় হাজার কেজি বেশি। তাই এ চিংড়ি চাষ বেশ লাভজনক।
ভেনামির ফলন পাওয়া যায় ৯০-১০০ দিনের মধ্যে। যেখানে বাগদা চিংড়ির ফলন পেতে হলে দরকার হয় ১৪০-১৬০ দিন। ভেনামি উচ্চফলনশীল বলে চায়না, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া, মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে এটির চাষ হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করছে ভারত।
এক সময় হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি থেকে দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এলেও এখন এই খাতটির অবস্থান সপ্তম। বর্তমানে বিশ্বের ৬২টি দেশে ভেনামি চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে এশিয়ায় রয়েছে ১৫টি দেশ।
বিশ্বে চিংড়ি বাণিজ্যের ৭৭ শতাংশ দখল করে আছে ভেনামি চিংড়ি। বাগদা চিংড়ির তুলনায় দাম কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
দেশীয় চিংড়ির উৎপাদন দিন দিন কমে আসছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিতে সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ। দেশীয় চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর উচ্চ-উৎপাদনশীল ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে খুলনার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলেও।
দেশে ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ সফল হয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ চিংড়ি চাষের অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন ভেনামি চিংড়ি চাষে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবে। তবে আগ্রহীদের অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে মিলবে এ সুযোগ।
অবশেষে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন পাওয়া গেল। সংবাদমাধ্যম থেকে সরকারি এই সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি এই শিল্পের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বর্তমান বিশ্বে উৎপাদিত চিংড়ির ৮০ শতাংশই ভেনামি। ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ অনুমোদনের ফলে দেশে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি দুটোই বাড়বে। ভেনামি চিংড়ি রপ্তানি বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে।