ভিসানীতি নিয়ে তোলপাড়

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ীদের’ ভিসা না দেওয়ার যে নতুন নীতি যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে তা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমেরিকার এই ভিসার রেস্ট্রিকশন শুধু সরকারি দলের ওপর না, অপজিশনের লোকজনেরও ওপর বর্তাবে। এতে করে আমরা আশা করি, এবার তারা (বিএনপি) ইনশাল্লাহ একটু সচেতন হবে।’

এদিকে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসানীতিকে ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে বড় ধরনের ‘সিগন্যাল’ বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরদিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। দূতাবাসের টুইটে বলা হয়, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন ব্যক্তিদের ভিসা সীমিত করার এই নতুন ভিসা নীতি সবার জন্য প্রযোজ্য।’

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান স্পষ্ট করার পরদিন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলন, এটা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়, নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। তাদের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং এজন্য সব কিছুই করবেন তারা।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠক
বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরদিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসায় এই বৈঠক হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক টুইটে জানান হয়। খবর বিডিনিউজের।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাতীয় পার্টির পক্ষে দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু এবং সভাপতিম-লীর সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল বৈঠকে ছিলেন।

বৈঠকে রাষ্ট্রদূত দেশের তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষিত ভিসা নীতি কারণ ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন নিয় যুক্তরাষ্ট্র যে নীতিমালা দিয়েছে, তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।’

‘ভিসা রেস্ট্রিকশনে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। কারণ, আমরাই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করেছি,গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করেছি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার করে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। নির্বাচন কমিশনকে ক্ষক্ষমতায়ন করেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।’

বৈঠকে পিটার হাসকে কী বলেছেন- এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে একটা মতামত দিয়েছি, সেটা আপনাকে বলছি।’

দেড় ঘণ্টা আলোচনার পর সেখান থেকে বেরিয়ে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভোট রিগিং হচ্ছে এটা বন্ধ করার জন্য আমরা স্বাগত জানাই তাদের পদক্ষেপকে। এটা তাদের (সরকার) জন্য বড় মেসেজ। এই মেসেজ না নিয়ে আবার যদি বাংলাদেশে ভোট চুরির প্রক্রিয়ায় তারা অব্যাহতভাবে কাজ করতে থাকে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের চিন্তা করা দরকার।’

সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতা মজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্কিন সরকার বাংলাদেশের যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে চেয়েছে। প্রতিটি দলই তাদের মতামত দিয়েছে। আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র একটা ফেয়ার ইলেকশন চায়। নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। এ ব্যাপারে আমাদের দলও একমত। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।’

বিএনপি এবার ‘সচেতন’ হবে, আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ীদের’ ভিসা না দেওয়ার যে নতুন নীতি যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, তাতে সরকার ‘মোটেও ভীত নয়’ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকার এই ভিসার রেস্ট্রিকশন শুধু সরকারি দলের ওপর না, অপজিশনের লোকজনেরও ওপর বর্তাবে। এতে করে আমরা আশা করি, এবার তারা (বিএনপি) ইনশাল্লাহ একটু সচেতন হবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়া আসে। খবর বিডিনিউজের।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বার্থেই’ তাদের এ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে যারা এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে সমর্থন দিতে এই নীতি ঘোষণা করেছেন তিনি।

তার ভাষ্য, ‘এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।’

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুদিন আগে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ইদানিং যে জ্বলাও-পোড়াও চলে, আমরা এই জ্বালাও-পোড়াও চাই না। তাই আমরা বিশ্বাস করব, ভিসা রেস্ট্রিকশনের ঘোষণা পর এই জ্বালাও-পোড়াও দলরা একটু সচেতন হবে। রাস্তা দখল করে যে আন্দোলন, ওগুলা কমবে। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়ে, পাবলিক এবং প্রাইভেট প্রোপার্টি ধ্বংস করে, জ্বালাও-পোড়াও করে গতবার তারা ৩৮০০টা গাড়ি, ২৭টা বগি জ্বালাইছে।’

মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। আর ‘গণতন্ত্র আছে বলেই’ দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে।

‘এ দেশে গত ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই একটা গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া চলছে। এর মাঝে হাজার হাজার নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার এসেছে। ২০০৮ সাল থেকে গণতান্ত্রিক মাধ্যমেই সরকার পরিচালিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকারে আসতে চায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের ওই ভিসা নীতি নিয়ে সরকার ‘মোটেও ভীত নয়’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শুনছি তো যে ওটা সব দেশের জন্য। ভালো তো। চিন্তার কিছু নাই। এটা বরং আমাদের অবস্থানকে আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে। আমরা স্বচ্ছ সুন্দর ইলেকশন করে দেব।’

মোমেনের ভাষ্য, স্বচ্ছ এবং সুন্দর নির্চানের জন্য সরকার ‘বদ্ধ পরিকর’। নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ হয়, সেজন্য বিগত বিছরগুলোতে সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে।

‘বিএনপির সময় ১ কোটি ২৩ লক্ষ ফেইক ভোটার তৈরি হয়েছে। যাতে ফেইক ভোট না হয়, সেজন্য ভোটারের ফটো আইডি করে দিয়েছি। কেউ কেউ অভিযোগ করে যে রাতের অন্ধকারে নাকি ভোট হয়ে যায়। সেজন্য আমরা স্বচ্ছ ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বাক্স তৈরি করেছি।ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের জন্য আমরা শক্তিশালী ইসি তৈরি করেছি। ইলেকশনের সময় এটাকে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার করার দায়িত্ব কিন্তু সে ইলেকশন কমিশনের, সরকার তাদের সাহায্য করবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করতে চাই, এইটাকেই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সমর্থন দিয়েছে। সুতরাং, নাথিং টু ওরিৃ। সেইসাথে তারা এও বলেছে যে মাননীয় প্রধান্মন্ত্রী শেখ হাসিনার যে একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের যে আগ্রহ, সেটাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তারা এই নীতিটা করেছে।’

গত ৩ তারিখ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে নতুন এই ভিসা নীতির ব্যাপারে প্রথম জানানো হয়। সেই চিঠির ব্যাপারে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, ‘আমাকে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠিতে অত্যন্ত সুন্দর কথা বলেছে, অপূর্ব চিঠি দিয়েছে। তারা তাদের কাজ করেছে। আমরা আমাদের কাজ করেছি। এটা বাড়তি কোনো প্রেশার না।’
চিঠির একটি অংশ উপস্থিত সাংবাদিকদের পড়ে শুনিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চিঠির এক জায়গায় উল্লেখ করেছে, দিস পলিসি সাপোর্টস প্রাইম মিনিস্টার হাসিনা’স স্টেডেড কমিটমেন্ট টু হোল্ড ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড অ্যালাও দ্য ইউনাইটেড স্টেটস টু অ্যাক্ট হোয়েন বাংলাদেশি সিটিজেন্স অর অফিশিয়ালস ফ্রম অল পলিটিক্যাল পার্টিস আন্ডারমাইন দিস ক্রিটিক্যাল পিলার অব ডেমোক্রেসিৃ তারা প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছে।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘সবই করবে ইসি’
বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোটে বাধা দিলে দায়ী ব্যক্তিদের ভিসা না দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নয় নির্বাচন আয়োজনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন। তবে একজন কমিশনার বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন তা তারা করবেন।

যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান স্পষ্ট করার পরদিন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলন, এটা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়, নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। তাদের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং এজন্য সব কিছুই করবেন তারা।

আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার। ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি সিসিটিভি ক্যামেরায় ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। খবর বিডিনিউজের।

ব্লিংকেনের এই ঘোষণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। কারণ, এ বিষয়গুলো হল আন্তঃরাষ্ট্রীয় ব্যাপার। এটা আমাদের নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হল সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এজন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার সবই করব আমরা।’

‘কে কখন বাধা দিয়েছে’, সেটা কমিশনের অংশ না মন্তব্য করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব পাওয়া কমিশনের এই সদস্য বলেন, ‘সে বিষয়ে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারের সঙ্গে তাদের (বাংলাদেশ সরকার) কী আন্ডারস্টেন্ডিং আছে বা কী হবে, তা তারা বলতে পারবে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

‘সরকার চাপ অনুভব করছে না’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তন নিয়ে সরকার চাপ অনুভব করছে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি এ কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তন সব নাগরিকের জন্য সমান। এটা আলাদা কোনো দল বা ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা নয়। আমার মনে হয় ভিসা প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন বিএনপির জন্যও প্রযোজ্য। তারা মানুষ পুড়িয়েছে, গণপরিবহনে আগুন দিয়েছে ও গর্ভবতী মায়ের অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখেছে। এগুলোর কারণে তাদের ভিসা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তনে সরকার চাপ অনুভব করছে না।’ খবর ঢাকাপোস্টের।

‘ইতোমধ্যে আমাদের সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে জানিয়েছে, ২০০৮ সালে একটি ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এর পরে জনগণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। তিনবার একটি দল ক্ষমতায় রয়েছে বলেই আমাদের নানামুখী উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আরও একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করতে হবে। অর্থনীতি, শিক্ষা, বাণিজ্য ও কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেকোনও মূল্যে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।’

‘কেউ যদি নির্বাচনে না আসে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা শেষ দিন পর্যন্ত চাইব বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। জনগণ, কূটনীতিক ও প্রশাসনসহ সবাইকে নিয়ে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।’

ক্ষমতাসীনদের ভোটচুরির বিরুদ্ধে বড় বার্তা: আমীর খসরু
বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসানীতিকে ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে বড় ধরনের ‘সিগন্যাল’ বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভোট রিগিং হচ্ছে- এটা বন্ধ করার জন্য আমরা স্বাগত জানাই তাদের পদক্ষেপকে।এটা তাদের জন্য বড় ম্যাসেজ। এই ম্যাসেজ না নিয়ে আবারো যদি বাংলাদেশে ভোটচুরির প্রক্রিয়ায় তারা অব্যাহতভাবে কাজ করতে থাকে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের চিন্তা করা দরকার।’ খবর বিডিনিউজের।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানানোর কারণ ব্যাখ্যায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত এসেছে। আমরা এটাকে ওয়েলকাম করছি এই কারণে যে, এটা হচ্ছে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মানুষের যে শঙ্কা নির্বাচনকে নিয়ে, অন্তত এই ধরনের একটি পদক্ষেপ আমি মনে করি আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

‘এটার মাধ্যমে যে সব কিছু হবে তা না কিন্তু এটা একটি সিগন্যাল, একটা ম্যাসেজ যে, বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না, বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কার মধ্যে আছে। (ভিসা নীতিতে) উল্লেখ করেছে যে, এই লোকগুলো, এই সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে এরা জড়িত এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বিএনপির জন্য সফলতা কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এটা সফলতার বিষয় না। বাংলাদেশের মানুষ যেদিন ভোট প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে তাদের সরকার নির্বাচিত করতে পারবে সেদিন হবে বাংলাদেশের জনগণের সফলতা।’

এই ভিসা নীতির ঘোষণায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা, এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশকে অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশে মানবাধিকার, বাংলাদেশে আইনের শাসন, জনগণেরর নিরাপত্তা ইত্যাদি সব ৃ মুক্তির সংগ্রামের পথে এটা একটা পদক্ষেপ, অনেকগুলো পদক্ষেপ এখানে নিতে হবে যাতে করে তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) আবারো ভোট চুরি করে দেশের ক্ষমতা দখল করতে না পারে।’

সরকারি দল যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে বিচলিত নয়, বিএনপি উদ্বিগ্ন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা উদ্বিগ্ন না হলে ভালো কথা। তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা এগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। তা না দিলে তাদেরকে উদ্বিগ্ন হতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে না দিয়ে আবার যদি মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকবে।’

পর্দার আড়ালের নায়ক ডোনাল্ড লু?
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে বাধা দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিধিনিষেধের এই ঘোষণা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন দিলেও এই বিষয়ে আলোচনায় রয়েছেন আরও এক ব্যক্তি। তার নাম ডোনাল্ড লু। তিনি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে আছেন। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা করলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও মার্কিন ভিসা পাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় এই কূটনীতিক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতে বেশ আলোচিত নাম হয়ে উঠেছেন। গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে ডোনাল্ড লুর নামই উঠে এসেছিল। খবর ঢাকাপোস্টের।

সংবাদমাধ্যম বলছে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক ডোনাল্ড লু দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিকদের মধ্যে নিজের কূটনৈতিক কর্মপদ্ধতির জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন লু।

যদিও তার কাজের পদ্ধতিকে অনেকে ‘জবরদস্তিমূলক’ হিসাবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। মূলত পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় নানা ইস্যুতে ডোনাল্ড লুর সম্পৃক্ততা এ অঞ্চলে তার এমন ভাবমূর্তিই তৈরি করেছে।

কে এই ডোনাল্ড লু?
২০২২ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস অফিসার হিসেবে ডোনাল্ড লু ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন সরকারের চাকরি করছেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতে মার্কিন মিশনের ডেপুটি চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু হচ্ছেন এই অঞ্চলের ওপর নজর রাখা স্টেট ডিপার্টমেন্টের শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক। কিরগিজস্তান এবং আলবেনিয়ায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এই কূটনীতিক দুই দফায় নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসে দায়িত্ব পালন করেছেন।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন ডোনাল্ড লু। এর আগে তিনি ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কিরগিজস্তানে এবং ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আলবেনিয়াতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আলবেনিয়ায় দায়িত্ব নেওয়ার আগে লু পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা সংকটের বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের ইবোলা রেসপন্স টিমের উপ-সমন্বয়কারী হিসাবে কাজ করেছিলেন।
এছাড়া কর্মজীবনের শুরুতে ডোনাল্ড লু মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাস বিষয়ক অফিসের উপ-পরিচালক, ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় বিষয়ক ব্যুরোতে, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে পলিটিক্যাল অফিসার হিসেবে, ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে পাকিস্তানের পেশোয়ার কনস্যুলেটে পলিটিক্যাল অফিসার হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন লু। এছাড়া চাকরি জীবনের প্রথম দিকে জর্জিয়ার তিবিলিসিতে কনস্যুলার অফিসার হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ এবং ডোনাল্ড লু
পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের আলোকে উভয় দেশের সর্বোত্তম স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রয়োজন। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে বিশ্বাস করে এবং বাংলাদেশ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশের স্বার্থে ভালো হলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরামে যোগ দেবে ঢাকা।
আর তাই এই উদ্যোগের প্রধান অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনার পর থেকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে এবং অনেকাংশে তা উন্নতিও করেছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা রয়েছে। বাণিজ্য, শিক্ষা, ভ্রমণ, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং যোগাযোগ রয়েছে।

প্রেসএনজা বলছে, বাংলাদেশে চীনা প্রভাব অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে না। কারণ বাংলাদেশ খুবই দক্ষতার সাথে প্রধান প্রধান দেশগুলোর সাথে, বিশেষ করে চীনের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ সম্পর্কেও সচেতন রয়েছে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোলাখুলিভাবে বলেছেন, বাংলাদেশের কোনও সামরিক আকাঙ্ক্ষা নেই এবং আমেরিকার আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ চীনকে তিনি দেখেন কেবল ঢাকার উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে।