ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েদের স্মরণীয় জয়

সুপ্রভাত ডেস্ক

শর্ট ফাইন লেগ থেকে সরাসরি থ্রোয়ে স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দিলেন সুলতানা খাতুন। বারেড্ডি আনুশকা রান আউট ধরে নিয়ে উল্লাসে মাতলেন নিগার-মারুফারা। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের পর উদযাপন হলো আরেক দফা। ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় এক জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৪০ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।
আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপে সাত ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। সমান ম্যাচে ভারতের প্রথম হার।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে রোববার বৃষ্টির কারণে ৪৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ব্যাটারদের সম্মিলিত অবদানে বাংলাদেশ করে ১৫২ রান। পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ায় অভিষিক্ত স্বর্ণা আক্তার ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি।
ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫৪ রানের। ৩৫.৫ ওভারে সফরকারীরা গুটিয়ে যায় স্রেফ ১১৩ রানে।

এই সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে ৬ বারের দেখায় বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। সীমিত ওভারের দুই সংস্করণ মিলিয়ে পরপর দুই ম্যাচে এলো দুটি জয়। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের জয় ছিল ৪ উইকেটে। খবর বিডিনিউজ।
এবারের জয়ে বড় অবদান মারুফা আক্তারের। এর আগে তিনটি ওয়ানডে খেলে ১৮ বছর বয়সী এই পেসারের ছিল না কোনো উইকেট। এক সিরিজ পর ওয়ানডে দলে ফিরে এবার ২৯ রানে তার শিকার ৪ উইকেট।
এই সংস্করণে পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের কারও সেরা বোলিং এটিই। ২০১৪ সালে কক্সবাজারে পাকিস্তানের বিপক্ষে লতা মন্ডলের ৩৫ রানে ৪ উইকেট ছিল আগের সেরা।
শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৩ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখা লেগ স্পিনার রাবেয়া খান এবারও নেন ৩টি, ৩০ রান দিয়ে।
ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। ফারজানা হকের ব্যাট থেকে আসে ২৭ রান। রান তাড়ায় দ্বিতীয় বলে মারুফাকে চার মেরে শুরু করেন স্মৃতি মান্ধানা। বাঁহাতি এই স্টাইলিশ ওপেনার মারুফার পরের ওভারে বাউন্ডারি মারেন আরেকটি।

ওই ওভারের শেষ বলেই স্মৃতিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মারুফা। উইকেটের পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ দেন নিগার। মারুফা পরে ফিরিয়ে দেন আরেক ওপেনার প্রিয়া পুনিয়াকেও। হারমানপ্রিত কৌরকে টিকতে দেননি নাহিদা। বাঁহাতি স্পিনার এলবিডব্লিউ করে দেন ভারত অধিনায়ককে। ইয়াস্তিকা ভাটিয়া ও জেমিমা রদ্রিগেসও পারেননি ইনিংস বড় করতে। দুজনই রাবেয়ার শিকার। ৬১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়েন দীপ্তি শর্মা ও আমানজত। দুই জনে গড়েন ৩০ রানের জুটি।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে ওভারের শেষ দুই বলে আমানজত ও স্নেহা রানাকে বিদায় করে দেন মারুফা। পরের ওভারের প্রথম বলে দীপ্তিকে ফেরান রাবেয়া। ৩ বলে ৩ উইকেট হারানোর পর ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় ভারত। টার্নিং উইকেটে এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মন্থর শুরু করে বাংলাদেশ। অষ্টম ওভারে ১৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে মুর্শিদা খাতুন সহজ ক্যাচ তুলে দিলে।
আরেক ওপেনার শারমিন আক্তার ১৮ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি। রান আউট হন তিনি। ষোড়শ ওভারে বাংলাদেশের রান যখন ২ উইকেটে ৪০, তখনই নামে বৃষ্টি। তাতে কমে যায় ওভার।

শুরুর ধাক্কা সামলে তৃতীয় উইকেটে ইনিংস সেরা ৪৯ রানের জুটি গড়েন ফারজানা ও নিগার। অভিষিক্ত পেসার আমানজত কৌরের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করার চেষ্টায় কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন ফারজানা। তার ৪৫ বলে ২৭ রানের ইনিংস গড়া ৫টি চারে। রিতু মনি টিকতে পারেননি। দলের স্কোর একশ পার হওয়ার পর আমানজতের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে থামেন নিগার। অধিনায়কের ৬৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে চার ৩টি।
নাহিদা আক্তার ও রাবেয়া এরপর দ্রুত বিদায় নিলে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১১৬। সেখান থেকে সুলতানার ২০ বলে ১৬ ও ফাহিমা খাতুনের অপরাজিত ১২ রানের সুবাদে দেড়শ ছাড়াতে পারে দল। ৩১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার আমানজত। শেষ পর্যন্ত যা কাজে এলো না। দারুণ জয়ের আনন্দে ভাসল বাংলাদেশ।