আফগানদের ধবলধোলাই

প্রথমবারের মতো আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ জিতল টাইগাররা

সুপ্রভাত ডেস্ক

ম্যাচের অষ্টম ওভারে আকাশের কান্নায় সিক্ত চারপাশ আর হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারী বাতাস। মাঠের অর্ধেক অংশেই গ্যালারিতে নেই ছাদ। তবু সিলেটের দর্শকদের দমে যাওয়ার নাম নেই। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অপেক্ষা করে গেলেন তারা লম্বা সময় ধরে। আগের ম্যাচেই মতোই মাঠ মাতিয়ে রাখলেন তারা উৎসবের আবহে। বাংলাদেশ দলও তাদের হতাশ করল না। ভেজা শরীরে ম্যাচজুড়ে তুমুল উৎসাহ জুগিয়ে যাওয়া দর্শকেরা মাঠ ছাড়লেন সাফল্যে ভেজা মনে তৃপ্তি নিয়ে।
৬ উইকেটের জয়ে এ বছরের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে নিল সাকিবের দল। সঙ্গে আফগানদের ধবলধোলাইয়ের আনন্দ তো আছেই।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম শনিবার তাসকিন আহমেদের আগুনে প্রথম স্পেলই কাঁপিয়ে আফগানদের। পরে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে দেড় ঘণ্টার বেশি ম্যাচ নেমে আসে ১৭ ওভারে। আফগানরা করতে পারে ১১৬ রান। ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৯। সেই রান তাড়া করে ফেলে তারা ৫ বল বাকি থাকতে।
একটা সময় অবশ্য মনে হচ্ছিল, জয়ের জন্য একটা সময় অপেক্ষা করতে হবে না। লিটন কুমার দাস ও আফিফ হোসেনের জুটি বাংলাদেশকে এনে দেয় উড়ন্ত সূচনা। তবে এরপর কমে আসে রানের গতি, হারাতে হয় উইকেট। তবে আগের ম্যাচের মতো শেষ সময়ে কোনো নাটকীয়তা এবার হয়নি। খবর বিডিনিউজ।
এই সিরিজ জয়ে প্রথমবার টানা চারটি দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারানোর পর মার্চে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ধারায় এলো এই সিরিজেও জয়।
বাংলাদেশের রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভারেই লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৫টি বাউন্ডারি। পরে হাত খোলেন আফিফও।
২০১৯-২০ বিপিএলে এই দুজনের ওপেনিং জুটির সাফল্যের ভেলায় শিরোপার তীরে ভিড়েছিল রাজশাহী কিংস। সেই জুটিই এবার দেখা গেল জাতীয় দলে। চোটের কারণে রনি তালুকদার ছিটকে যাওয়ায় একাদশে ফিরে ওপেনিংয়ে জায়গা পেলেন আফিফ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার চার নম্বর পজিশনের ওপরে ব্যাট করলেন তিনি।
লিটন-আফিফের জুটিতে ৫০ চলে আসে ৫ ওভারেই। এরপরই রানের গতিতে রাশ টেনে ধরেন আফগানরা।
৫৫ বলে ৬৭ রানের উদ্বোধনী জুটি থামে রশিদ খানের অসাধারণ ক্যাচে। শর্ট কাভারে ডান দিকে পাখির মতো উড়াল দিয়ে বল তালুবন্দি করেন আফগান অধিনায়ক। হতভম্ব লিটন ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। প্রথম ১০ বলে তার রান ছিল ২২। শেষ পর্যন্ত বিদায় নেন ৩৬ বলে ৩৫ রান করে।
মুজিবের ওই ওভারে বিদায় নেন আফিফও। দুই ছক্কায় ২০ বলে ২৪ রান করে থামে তার ইনিংস। অল্পতে বিদায় নেন পরে নাজমুল হোসেন শান্ত। ৯ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে একটু চাপে পড়ে যায় দল।
তবে সেই চাপ দ্রুতই সরিয়ে দেন তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান। ২১ বলে তাদের ৩১ রানের জুটি দলকে এগিয়ে নেয় জয়ের কাছে।
আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে দারুণ এক ছক্কা মারার পরের বলেই হৃদয় উইকেট ছুড়ে আসেন ১৯ রান করে। তবে শামীম হোসেনকে নিয়ে নির্ভরতায় কাজ শেষ করে সাকিব।
রশিদ খানকে বিশাল এক ছক্কাসহ ১১ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শামীমের বাউন্ডারিতে শেষ হয় ম্যাচ।
ম্যাচের শুরুটা ছিল তাসকিনের বারুদের গন্ধে। গতি আর আগ্রাসনের ঝড় তোলেন তিনি প্রথম স্পেলে। ম্যাচের প্রথম ওভারে পরাস্ত হয়েও ব্যাটের কানায় লেগে ছক্কা পেয়ে যান রহমানউল্লাহ গুরবাজ। পরের বলেই আরেকটি শর্ট ডেলিভারিতে তাকে ফিরিয়ে শোধ তোলেন তাসকিন। টি-টোয়েন্টিতে পূর্ণ করেন ৫০ শিকার।
নিজের পরের ওভারে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তিনি বিদায় করেন দেন আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাইকেও।
তাসকিনের সঙ্গে হাসান মাহমুদ ও নাসুম আহমেদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে আফগানিস্তান প্রথম ৫ ওভারে করতে পারে মোটে ২১ রান। পরের ওভারে মুস্তাফিজের বলে দুটি বাউন্ডারিতে পাওয়ার প্লেতে ৩০ ছাড়াতে পারে তারা।
অষ্টম ওভারে বৃষ্টি নেমে খেলা বন্ধ থাকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময়। বিরকির পর নাসুমের টানা দুই জীবন পান মোহাম্মদ নবি। প্রথমটিতে কাভারে সহজ ক্যাচ ছাড়েন সাকিব আল হাসান, পরেরটিতে বল গ্লাভসে নিতে পারেননি লিটন।
পরের ওভারেই অবশ্য নবিকে ফেরান মুস্তাফিজ। আগের ম্যাচে ফিফটি করা অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার এবার ২২ বল খেলে করতে পারেন ১৬।
রান করতে ধুঁকছিলেন তিনে নামা ইব্রাহিম জাদরানও। তার রান তখন ২৩ বলে ১৩। পরে মুস্তাফিজকে ছক্কা মেরে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত পুষিয়ে দিতে পারেননি। ইব্রাহিম ও নাজিবউল্লাহ জাদরানকে এক ওভারেই বিদায় করেন সাকিব।
আফগানিস্তানের জন্য তখন একশ রানই খানিকটা দূরের পথ। আজমতউল্লাহ ওমারজাই ও করিম জানাত সেই পথটুকুতে এগিয়ে নেন দলকে। ২৯ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন দুজন।
তবে তাদেরকে শেষ পর্যন্ত টিকতে দেয়নি বাংলাদেশ। বরং প্রবল দাপটে ঘুরে দাঁড়ান বোলাররা। শেষ ওভারে রশিদ খানের বিশাল একটি ছক্কা ছাড়া শেষ তিন ওভারে আর কোনো বাউন্ডারি আসেনি। আফগানদের রান তাই ১২০ ছুঁতে পারেনি।
সেই পুঁজি নিয়ে তারা পারেনি শক্ত চ্যালেঞ্জ গড়তে। ওয়ানডে সিরিজ হেরে গেলেও টি-টোয়েন্টিতে জয়ের স্বস্তিই সঙ্গী হলো বাংলাদেশের।