ভর্তা-ভাতেও বেড়েছে খরচ

স্বস্তি নেই সবজি বাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক »
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। দিনের পর দিন বাড়তি দামের কারণে অনেকের মুখে মাছ-মাংস জুটছে না। দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দু’মুঠো ভর্তা-ভাত জোটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। তেল-চিনি-ডিমের পর নগরীর বাজারগুলোতে আলুর দাম বাড়ায় এখন ভর্তা-ভাতেও বেড়েছে খরচ। এ নিয়েই কপালে ভাঁজ পড়ছে সীমিত আয়ের মানুষের।
আলুর বাড়তি দাম দরিদ্র মানুষের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে দাঁড়িয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষেরা বলছেন, মাছ-মাংস ও সবজির যে দাম তাতে বেশিরভাগ সময় ভর্তা-ভাত খেয়েই তাদের দিন যাপন করতে হয়। হঠাৎ আলুর দাম বাড়ায় ভর্তা-ভাতের খরচ জোগাড়ও কষ্টকর হবে তাদের জন্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুওে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৭ টাকায়, যা দুদিন আগেও ছিল ১৮-২০ টাকা।
আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে বহদ্দারহাটের আলু ব্যবসায়ী মো. আলমগীর বলেন, গত রোববারও এক কেজি আলু ২০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু পাইকারিতে দাম বাড়ায় এখন ২৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন কোল্ড স্টোরেজে আলুর মজুদ প্রায় শেষ হয়েছে, তাই দাম বাড়ছে।
নগরীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে। পাকিস্তানি কক বা সোনালিকা মুরগির কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি কেজি ২২০-২৩০ টাকা।
মুরগির পাশাপাশি সবজির দামও এখনও বেশ চড়া। করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০, পটল ৪০ থেকে ৫০, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৬০ ও বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০-৩৫ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১৫-২০ টাকা আর কলমি শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা মানভেদে টমেটো ও গাজরের কেজি বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়। শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা। ঝিঙে ৪০-৫০ টাকা। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। মুলার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে রিকশাচালক আবদুস সাত্তার বলেন, বাড়তি দামের কারণে গরু ও ছাগলের মাংস খাওয়া অনেক আগেই বাদ দিয়েছি। মুরগি খাচ্ছি না অনেকদিন। বেশিরভাগ সময় আলুভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খাই। এখন সে পথও বন্ধ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। আলুর দাম বাড়ছে। ভাত-ভর্তাও খেতে পারবো না।
পোশাককর্মী শ্যামলী সুপ্রভাতকে বলেন, দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে চাল ও আটা কিনি। পেঁয়াজ ও তেল টিসিবির ট্রাক থেকে কেনার চেষ্টা করি। এরপরও কুলিয়ে উঠতে পারছি না। করোনার কারণে একদিকে আয় কমেছে, অন্যদিকে সবকিছুর দাম বাড়ছে। মাসে যে টাকা বেতন পাই, তা ভর্তা-ভাত খেয়েই শেষ। অনেক দিন মাংস চোখে দেখিনি।