ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত ১৭

সুপ্রভাত ডেস্ক »

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি কনটেইনার ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এগার সিন্ধুর এক্সপ্রেসের দুটি বগি উল্টে অন্তত ১৭ জনের প্রাণ গেছে। গতকাল সোমবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের সুপার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মালবাহী ট্রেনটি এগার সিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিতে আঘাত করে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’
সন্ধ্যা সোয়া ৭টা নাগাদ ১৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।

ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ করছে জানিয়ে সংস্থাটির সিনিয়র স্টাফ অফিসার শাহজাহান শিকদার বলেন, আহতের সংখ্যা শতাধিক হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

ঘটনাস্থলে থাকা ভৈরব রেলওয়ে থানার এস আই মির্জা মো. মুক্তা বলেন, দুর্ঘটনায় উল্টে যাওয়া বগিগুলোর নিচে কেউ চাপা পড়ে আছে কি না, তা দেখছেন উদ্ধারকর্মীরা। বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা ভিড় করে আছেন সেখানে।

দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কিশোরগঞ্জের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জে থেকে ছেড়ে আসা এগার সিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর কনটেইনারবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল।

‘এগার সিন্ধুর যখন ঢাকার দিকে যাচ্ছিল, তখন এটার পেছনের অংশে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। সেখানে একটা সাইড কলিশন হয়েছে। যার ফলে হতাহত আছে। পুলিশ, ফায়ারসার্ভিস সেখানে কাজ করছে। আমাদের উদ্ধারকারী ট্রেন ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে।’

ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল বন্ধ
ভৈরবে এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের পর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কিশোরগঞ্জের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সোমবার বেলা পৌনে ৪টার দিকে ভৈরব স্টেশনের আউটারে এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর আখাউড়া জংশন থেকে টঙ্গী জংশন পর্যন্ত রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দুই দিকে সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধূলী, কালনী এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, সোনারবাংলা ট্রেন আটকে পড়েছে।’

সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় তিনি বলেন, ‘আমাদের রিলিফ ট্রেন ঢাকা রওনা হয়ে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। মেরামত শেষে কখন ট্রেন চলাচল আবার শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না।’

কনটেইনার ট্রেনের চালক সিগন্যাল ‘অমান্য করায়’ দুর্ঘটনা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য কনটেইনারবাহী ট্রেনের চালক ও তার সহকারীকে দায়ী করছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম।

বিডিনিউজের জিজ্ঞাসায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা পেয়েছি ওই কনটেইনারবাহী ট্রেনটির চালক ও সহকারী চালক সিগন্যাল অমান্য করায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তাদের দাঁড়ানোর কথা ছিল ভৈরব স্টেশনের আউটার সিগন্যালে।’

‘কিন্তু তারা সেটি না করে সিগন্যাল অমান্য করে ট্রেনটি চালিয়ে চলে আসে। একই সময় ভৈরব স্টেশন থেকে বের হয়ে ঢাকার পথে আসছিল যাত্রীবাহী এগার সিন্ধুর এক্সপ্রেস। চট্টগ্রামমুখী মালবাহী ট্রেনটির ইঞ্জিন এগার সিন্ধুরের পেছন থেকে তৃতীয় বগিতে আঘাত করে।’

কোনো স্টেশনের আউটার হচ্ছে ট্রেনগুলোকে অপেক্ষায় রাখার জায়গা। অন্য ট্রেনকে জায়গা দিতে আউটার এলাকায় ট্রেন থামার সংকেত বাতি (সিগন্যাল) আগেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।

সেই সংকেত বাতি জ্বলেনি, নাকি কনটেইনার ট্রেনের চালক সংকেত দেখতে পাননি- এমন প্রশ্নের উত্তরে রেল কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, ‘এটা তো তদন্তের বিষয়। তিনি সিগন্যাল দেখেননি, না অন্য কোনও কারণ ছিল- এসব খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি কাজ করবে।’

রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জানান, এগার সিন্ধুর যখন ঢাকার দিকে যাচ্ছিল, তখন এটার পেছনের অংশে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। ‘সেখানে একটা সাইড কলিশন হয়েছে। যার ফলে হতাহত আছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সেখানে কাজ করছে। আমাদের উদ্ধারকারী ট্রেন ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে।’

এ ঘটনায় কনটেইনারবাহী ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার) জাহাঙ্গীর আলম ও সহকারী লোকো মাস্টার আবিদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, মালবাহী ট্রেনটি এগার সিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিতে আঘাত করে বলে প্রাথমিকভাবে তারা জেনেছেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা নাগাদ ১৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, উদ্ধারকাজ চলছে।

৩ জন বরখাস্ত, তদন্তে ২ কমিটি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে; ঘটনার তদন্তে গঠন করা হয়েছে দুটি কমিটি। রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মালবাহী ট্রেনটি এগার সিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিতে আঘাত করে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’

পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার জানান, এ ঘটনায় রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন ও পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।