বে-টার্মিনাল

এক নজরে …..

চট্টগ্রাম বন্দরের মেগা প্রকল্প বে-টার্মিনাল। পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার সাগরতীর ঘেঁষে প্রস্তাবিত এই টার্মিনাল হবে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়েও বড়। চট্টগ্রাম বন্দর বছরে যে পরিমাণ পণ্য হ্যান্ডলিং করতে পারে, শুধু বে-টার্মিনালেই হ্যান্ডলিং করা যাবে এর কয়েকগুণ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান সড়ক ও রেল যোগাযোগের সুবিধা পাবে। এখানে একসাথে ৩৫টি জাহাজ বার্থিং করতে পারবে। জাহাজ ভাড়া কমে আসবে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান, ডিটেইল ড্রয়িং, ডিজাইন ও নির্মাণকাজ সুপারভিশন করতে গত বছর (২০২২ সাল) মে মাসে কোরিয়ান দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডাইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়। এবছরের মে মাসের শেষদিক থেকে এসে প্ল্যান রিভিউ করার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। লে-আউট নিয়ে কিছু অবজারবেশন থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাস্টার প্ল্যানে পরিবর্তন আনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। মাস্টার প্ল্যান রিভিউ করা হলে প্রকল্পের নির্মাণ প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় তিনটি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে একটি নির্মাণ ও পরিচালনা করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটি টার্মিনাল পিপিপি ভিত্তিতে বিদেশি বিনিয়োগে নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটিকে। প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে প্রকল্পের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা খানিকটা এগিয়েছে। তবে মাস্টার প্ল্যান পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে আসায় সেই আলোচনায় এখন কিছুটা ভাটা পড়েছে।

প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে থাকবে এ টার্মিনালের স্থাপনা। এর মধ্যে ৬৭ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি ২০২১ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আরও ৮০৩ একর জমি নামমাত্র বা প্রতীকী মূল্যে পাওয়ার চেষ্টা চলছে। বাকি জমি পর্যায়ক্রমে সমুদ্র থেকে রিক্লেইম করা হবে।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য চ্যানেল ড্রেজিং এবং ব্রেকওয়াটার নির্মাণকাজের পরামর্শদাতা হিসেবে সরকার ইতোমধ্যেই চারটি জার্মান সংস্থা-সেলহর্ন, ডাব্লুএসপি, কেএস এবং অ্যাকোয়া-কে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এবং চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লাগবে। প্রকল্পের চারটি অংশের একটি ‘ব্রেকওয়াটার অ্যান্ড অ্যাকসেস চ্যানেল’-এর জন্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা এবং এর পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়নসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ না হলে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ নেওয়ার ব্যাপারটি আরও এক বছর বিলম্বিত হতে পারে।

বে-টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার লম্বা জাহাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর, ৬ হাজার কন্টেইনার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজও বন্দরে ভিড়তে পারবে। বর্তমানে ১৮০০ কন্টেইনারবাহী জাহাজই বন্দরে ভিড়তে পারে।

বর্তমানে জেটিতে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে জাহাজ ভেড়ানো হয়। বহির্নোঙর থেকে কোন জাহাজকে জেটিতে আনতে হলে জোয়ার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ভাটার সময় এ কাজ করা যায় না। এতে জাহাজগুলোকে জোয়ারের অপেক্ষায় বহির্নোঙরে বসে থাকতে হয় । কিন্তু বে-টার্মিানালে দিনরাত সব সময় জেটিতে জাহাজ ভিড়তে ও ছেড়ে যেতে পারবে। জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

২০২৫ বা ২০২৬ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হলেও এখনো নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি।