বেপরোয়া রোহিঙ্গারা

ক্যাম্পে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অটোমেটিক অ্যাসল্ট রাইফেল ও ৪৯১টি গুলি মিলেছে
আটক ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। প্রতিদিন তারা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে শিবিরের বাইরে গিয়ে চুরি-ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, মানবপাচার, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য পাচারসহ ইত্যাদি অপরাধ করে পুনরায় শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
জানা গেছে, জুন মাসেই ঘটেছে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে তিনটি খুনের ঘটনা। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন রোহিঙ্গা। এখন তারা শুরু করেছেন প্রশাসনের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ। মারাত্মক এই হিংস্রতার থাবায় ক্যাম্পের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এম ব্লকে ৮ এপিবিএন এর টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় অজ্ঞাত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা, পরে আত্মরক্ষায় গুলি ছুড়েন এপিবিএন সদস্যরা। পুলিশের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের ঘটনা এই প্রথম নয় ইতোপূর্বেও তারা অহরহ এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। গোলাগুলির ঘটনায় এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পিছু হটলে ঘটনাস্থল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি অটোমেটিক অ্যাসল্ট রাইফেল এবং ৪৯১টি গুলি পাওয়া যায়।’
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কামরান হোসাইন।
তিনি বলেন, ঘটনার পর ক্যাম্প এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে বাড়ানো হয়েছে তৎপরতা।
এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএনের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে।
অভিযানে পুলিশের পক্ষ থেকে ৫ রাউন্ড গুলি (৩ রাউন্ড পিস্তল এবং ২ রাউন্ড শটগান) ছোড়া হয়। এই ঘটনায় পুলিশের কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনার পরপরই সকল ক্যাম্পসমূহে একযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ২ জনকে আটক করা সম্ভব হয়। আটককৃতরা হলেন ক্যাম্প ১৫ এর মোহাম্মদ হোসেন (৩০) ও জাহেদ হোসেন (৩০)। তাদের কাছে পাওয়া যায়, ১ টি বিদেশি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড ৭.৬৫ এম. এম. তাজা গুলি এবং ৬ হাজার ৩০০ ইয়াবা।
একইদিন কক্সবাজারের টেকনাফের নোয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুরালীপাড়া সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৪টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করেছে এপিবিএন পুলিশ। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় সাত ঘণ্টা এ অভিযান পরিচালনা করে এসব অস্ত্র উদ্ধার করেছে ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ।
১৬ এপিবিএন এর অধিনায়ক এসপি মো. তারিকুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৬ এপিবিএন এর কমান্ডো টিমসহ ৮০ জন সদস্যের একটি টিম বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের নুরালীপাড়া সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় ড্রোনের সাহায্যে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনাকালে পাহাড়ি এলাকায় গুহার মধ্যে অজ্ঞাতনামা ডাকাতদল কর্তৃক লুকিয়ে রাখা ৪ টি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র (এলজি) ও ৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে ডাকাতদের মধ্যে কাউকেই পাওয়া যায়নি। অজ্ঞাত ডাকাত সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ১৫ জুন দিনগত রাত ১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প-২ ও ক্যাম্প-৬ এর মাঝামাঝি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলিতে সলিম (৩০) নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত সলিম উখিয়ার ক্যাম্প-২, ওয়েস্ট ব্লক-সি/২ এর আবদু শুক্কুরের ছেলে।
অপরদিকে ৯ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আজিম উদ্দিন নামের এক রোহিঙ্গা নেতাকে (মাঝি) কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় সৈয়দ করিম (৪০) রহিমুল্লাহ (৩৬) নামের আরো ২ জন রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হন। আহতরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নিহত আজিম উদ্দিন ওই ক্যাম্পের নেতা।
অন্যদিকে ১০ জুন দিনগত রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ের ৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে মোহাম্মদ সমিন (৩০) নামের এক যুবকের হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। মোহাম্মদ সমিন ওই ক্যাম্পের মধুরছড়ার সি ব্লকের বাসিন্দা।
এপিবিএন সূত্র জানায়, ক্যাম্পের বাসিন্দারা সমিনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এপিবিএনকে খবর দেয়। পরে তাকে ক্যাম্পের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার সারা শরীরে আঘাত ও পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সচেতন এলাকাবাসী মনে করছেন অচিরেই ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ও বাইরে অবস্থান রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অন্যথায় তাদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।