বেড়েছে জিরা আমদানি

রাজিব শর্মা »

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের নতুন জিরার আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খাতুনগঞ্জের আড়তে পাইকারি পর্যায়ে জিরার দাম কমেছে, তবে এখনো প্রভাব পড়েনি খুচরা পর্যায়ে। পণ্যটির দাম কমায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আমদানিকারকরা।
আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানের আগে স্থলপথ দিয়ে ভারতের নতুন জিরা আমদানি বেড়েছে। ভারতীয় জিরা দেশের বাজারে প্রবেশ করছে দিনাজপুরের হিলি বন্দরসহ সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমায় আমদানি জিরার দামও কমেছে।
রোববার দুপুরে খাতুনগঞ্জে আড়তে দেখা যায়, কেজি প্রতি আমদানিকৃত ভারতীয় ভালো মানের কাকা জিরা ৭২০, বাবা জিরা ৭২০, মধু জিরা ৭২০, অমরিত জিরা ৭২০ টাকা, সোনা জিরা ৭৩০ টাকা ও ডিবিগোল্ড জিরা ৭৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যে মানের জিরা দেড় মাস আগেও আড়ত পর্যায়ে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২২০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে এ কয়েকদিনের ব্যবধানে কমেছে কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪৭০ টাকা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী এখনো দাম বাড়তি
এদিকে স্থলপথ দিয়ে আমদানি বাড়ার ফলে পাইকারিতে দাম কমতির দিকে থাকলেও সরকারি বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে বছরের ব্যবধানে এখনো জিরার দাম বেশ চড়া বলে জানা যায়।
শনিবার সরকারি বাজার তদারকি সংস্থার তথ্যমতে মধ্যম মানের জিরা বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। যা গতবছর এদিনে বিক্রি হয়েছিল ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা। বছরের ব্যবধানে ১০০ থেকে ২৭০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক মো. আবু তাহের সওদাগর বলেন, ‘ভারতের বাজারে পর্যাপ্ত জিরা রয়েছে। কিন্তু দেশের ব্যাংকে এলসি জটিলতা কাটেনি। তবুও দিনাজপুর হিলি বন্দর দিয়ে জিরা আসায় আমদানিকারকদের থেকে আমরা জিরা সংগ্রহ করেছি। যতটুকু জেনেছি, ভারতের নতুন জিরা বের হয়েছে। আর বাকি জিরা বের হবে মার্চের মাঝামাঝি। ভারতের বাজারে জিরার দাম কমলেও এলসি বুকিং রেট বাড়তির কারণে দেশীয় বাজারে তেমন কমছে না।
খাতুনগঞ্জের এ এন ট্রেডার্সের মালিক জহুর আহমেদ বলেন, হিলি বন্দরে ভারতের নতুন জিরার আমদানি বেড়েছে। এভাবে চলমান থাকলে দাম আরও কমবে। বর্তমান বাজারে ভারতীয় জিরার চাহিদা বাড়ায় মিশরের জিরা আমদানি বন্ধ রেখেছি।
এদিকে আমদানি বাড়ার বিষয় সুপ্রভাতকে নিশ্চিত করেছেন হিলি হাকিমপুরের জিরা আমদানিকারক মো. তমিজ উদ্দিন মিয়াজী। তিনি বলেন, দিনাজপুরের স্থলপথ গত ১৫ দিন ধরে ভারতীয় জিরা আসছে। দামও ব্যবসায়ীদের অনুকূলে রয়েছে। যোগান বাড়াতেই এবার ঈদে জিরার দাম বাড়ার সম্ভাবনা তেমন নেই বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে
ব্যবসায়ীরা ডলার সংকট ও ভারতে জিরার ফলন কম এবং আমদানি কমে যাওয়ার অজুহাতে গতবছর কোরবানের আগে থেকে বাজারকে অস্থির করে তুলেছিলেন। ওইসময় কেজিপ্রতি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ পর্যন্ত বিক্রি হয় জিরার গুঁড়া। সর্বশেষ চলতি বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও ১ হাজার ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। চলতি বছরে ভারতে নতুন জিরার ফলন ভালো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমতির দিকে। তবে এখনো তার কোন প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে।
রোববার দুপুরে বক্সিরহাট ও ফিরিঙ্গী বাজারের মসলার খুচরা দোকানগুলোতে জিরা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। আর মিহি জিরা গুঁড়া বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
বক্সিরহাটে জিরা কেনার সময় কথা হয় মো. আলমগীর নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, সামনে রমজান। এ সময় মসলার চাহিদা বাড়ে। বাজারে এসে দেখি, গত বছর জিরার বাজার যেভাবে চড়া হয়েছিল তার থেকে কিছুটা দাম কমেছে। কিন্তু আমদানি ও সরবরাহ ভালো থাকায় পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরাতে কেন কমছে না তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার।
বক্সিরহাটের দত্ত অ্যান্ড কোম্পানির খুচরা ব্যবসায়ী অনিমেষ ঘোষ বলেন, ‘পাইকারিতে পূর্বের কেনা থাকার কারণে চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন জিরা কিনলে কম দামে বিক্রি করা হবে।’