পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য বজায় রাখা হোক

সিডিএ আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোড সড়ক নির্মাণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে সিডিএ। তখন সৈকতে প্রশস্ত সড়ক এবং বাগান করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে বাগানের ওপর সারি সারি দোকান বসে যায়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তালিকাভুক্ত দোকানের সংখ্যা দেড় শ। এখন অবৈধভাবে আরও অন্তত ছয় শ দোকান বসানো হয়েছে। জানা গেছে, দোকানিদের দৈনিক ভিত্তিতে দিতে হয় চাঁদা। অভিযোগ আছে, দোকানগুলো থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে একটি চক্র, সে হিসেবে বছরে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো।

সৈকতে বর্তমানে খাবার, গয়না, খেলনাসহ বিভিন্ন রকমের প্রায় সাড়ে সাত শ দোকান রয়েছে।
জানা গেছে, চার থেকে পাঁচ বছর ধরে এসব দোকান বসানো হয়। সৈকত এলাকায় ব্যবসা করতে গেলে বৈধ-অবৈধ সব দোকানকে প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। দোকান ও আয়তনের ধরনভেদে প্রতিদিন গড়ে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।
সৈকতের খেজুরতলা এলাকা থেকে নেভাল একাডেমির আগপর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে দোকান। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য করা বাগানগুলোও দখল করে বসানো হয়েছে চেয়ার-টেবিল।

সৈকতে প্রবেশপথের পাশেই নাগরদোলা, চরকাসহ বিভিন্ন রাইড। ভাটার সময় সৈকতের বালুচরেই বসছে দোকান। সৈকতে ঘুরতে আসা লোকদের অভিযোগ , সৈকতে পদে পদে উৎপাত। দোকান আর দোকান, চেয়ার-টেবিল আর পার্কের মতো শিশুদের রাইড। খাবারের দোকানে দাম আকাশছোঁয়া। স্পিডবোট ও ক্যামেরাম্যানরাও জোর করে বাড়তি টাকা নেন। পাড়ে থাকা চেয়ারগুলোয় বসলেও টাকা দিতে হয়। এ বিষয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এখানে তালিকাভুক্ত দোকানির বাইরে সবাই অবৈধ। এগুলো উচ্ছেদ করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কবে উচ্ছেদ হবে? কারণ সৈকতের এই বিড়ম্বনা আজকের নয়। স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় একাধিকবার এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সৈকতে কোনো চাঁদাবাজি বা অবৈধ ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। দোকানিদের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেটিও হবে সৈকত থেকে দূরে। সৈকতের পাশে কোনো দোকান থাকবে না। সৈকত হবে উন্মুক্ত।’
আমরা জেলা প্রশাসকের ওপর আস্থা রেখে বলতে চাই, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সাধারণ মানুষের জন্য অবারিত থাকুক, উন্মুক্ত থাকুক; নাগরিক জীবনের কর্মব্যস্ততা শেষে মানুষ যেন বুক ভরে বাতাস নিতে পারে।