বিজ্ঞানীদের সাফল্য, মৎস্যচাষে সুসংবাদ

দেশে প্রথমবারের মতো হ্যাচারির ট্যাংকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ভেটকি বা কোরাল মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন বিএফআরআই’র বিজ্ঞানীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে হ্যাচারিতে কয়েকটি মা মাছ প্রায় ২৫ লাখ ডিম ছাড়ে এবং গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে সে ডিম ফোটে রেণু হতে শুরু করে। এ প্রক্রিয়া তিনদিন পর্যন্ত চলবে বলে জানান কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর কর্মকর্তারা।
ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, এই কেন্দ্রের এক দল গবেষক দীর্ঘদিন ধরে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল মাছের পোনা উৎপাদন নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণা করছেন। কেন্দ্রের হ্যাচারিতে আবদ্ধ পদ্ধতিতে মা মাছ তৈরি করে ২৩ নভেম্বর ব্রিডিং ট্রায়ালে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সন্তোষজনক সাফল্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান শাকিলের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের একদল গবেষক এ সাফল্য পান।
বাংলাদেশে কোরাল মাছের বৈজ্ঞানিকভাবে চাষ হয় না বললেই চলে। মে-জুন মাসে ঘের মালিকরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে ভেটকি মাছের পোনা সংগ্রহ করে বাগদা চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের সাথে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করে থাকে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ সালে কোরাল মাছের পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণার জন্য মালেশিয়ার তেলেঙ্গানা ইউএমটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করলেও এখনও তারা সফল হয়নি।
ভেটকি বা কোরাল মাছ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু বৃহৎ আকারের সামুদ্রিক মাছ। এ মাছটি কম কাঁটাযুক্ত, দ্রুত বর্ধনশীল ও খেতে সুস্বাদু বলে এর বাজারমূল্য বেশি। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ মাছের ব্যাপক চাহিদা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা ভেটকি বা কোরাল মাছ চাষের উপযুক্ত বলে মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের কোরাল মাছ চাষ বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের মাঝে চিংড়ির সাথে কোরাল মাছেরও চাষ করা হয়। কোরাল মাছ লবণাক্ত, আধা-লবণাক্ত, এমনকি মিঠা পানিতেও অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। এ মাছের রোগ বালাই কম বলে সাম্প্রতিককালে অনেকেই চিংড়ি চাষ বাদ দিয়ে ভেটকি চাষ করে সফল হয়েছেন। তবে পোনা সংকটের কারণে এ মাছের চাষকে সম্প্রসারিত করা যাচ্ছে না। অথচ অর্থনীতিতে এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর দূষণের কারণে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে স্বাদুপানির মাছের উৎপাদন কমছে। ফার্মের মাছের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা চলছে। এর মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হিসেবে চারটি দেশ যথা, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও উগান্ডা উৎপাদন ধরে রেখেছে। সামগ্রিকভাবে স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এবারও ভারত ও চীনের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ফার্মের মাছ উৎপাদনেও বাংলাদেশ একই অবস্থানে।
এই সাফল্যের সঙ্গে কোরাল উৎপাদন যুক্ত হলে বাংলাদেশের অবস্থান দ্রুত সামনে চলে আসবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এটি বড় ভূমিকা রাখবে তাতে সন্দেহ নেই। এই সাফল্যের যাত্রা যাঁদের দ্বারা রচিত হলো তাঁদেরকে অভিনন্দন জানাই।