বাড়তি ভাড়া, গাড়ি পেতে ভোগান্তি

চবিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের শিডিউল বির্পযয় ও রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় ভোগান্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে স্নাতক (সম্মান) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। তবে শাটল ট্রেনের দেরি হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে ১৫ মিনিট পরে পরীক্ষা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ ’ ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক (সম্মান) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। এ বছর আবেদনকারীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৫৬ জন। আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৯২৬টি অর্থাৎ প্রতি আসনের জন্য লড়বেন ৪১ জন ভর্তিচ্ছু শির্ক্ষাথী। ‘এ ’ ইউনিটে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিলো ৭৪ হাজার ৬৫৯ জন। প্রথমদিন ‘এ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দুই শিফটে অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার ৬৬৫জন করে মোট ৩৭ হাজার ৩৩০ জন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ৯ শিডিউলে চলতে থাকা শাটল প্রথম দিনেই সম্মুখীন হয় শিডিউল বিপর্যয়ের। যার কারণে ১১টায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষা শুরু হয় ১১টা ১৫ মিনিটে। ভোর থেকেই বিভিন্ন যানবাহনে চেপে ভর্তিচ্ছুরা ভিড় করেন ক্যাম্পাসে। তবে পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয় অনেককেই। এদিকে এসব যানবাহনের ভাড়াও হাঁকা হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। কেবল প্রধান সড়কে নয়, ক্যাম্পাসের অন্তর্বর্তী চলাচলের যানবাহনগুলোতেও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করতে দেখা গেছে। তবে এবার পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আসন বিন্যাস নিশ্চিত হওয়ার কারণে ক্যাম্পাসে আসন খুঁজে পেতে তেমন ভোগান্তি দেখা যায়নি। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের জন্য আবাসিক হল ও চাকসু ভবন উন্মুক্ত করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থী মৌমিতা বলেন, ‘পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যেহেতু অনেক, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এরকম ভোগান্তির বিষয়টি ভাবা প্রয়োজন ছিলো। ভর্তি পরীক্ষা চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজে হলে এ ধরনের সমস্যা হতো না। এখন গাড়ি পাওয়া মুশকিল। এরমধ্যে একটা গাড়িতে এতো বেশি যাত্রী উঠছে তাও কেউ দেখছে না। রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি করে এসে পরীক্ষা দিয়ে আবার ধাক্কাধাক্কি করে বাসায় আসতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের হেল্ড ডেস্ক রয়েছে। সহকারী প্রক্টররাও মাঠে থাকছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। খাবারের যাতে অতিরিক্ত দাম নিতে না পারে তার জন্য খাবারের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নকল, জালিয়াতি, র‌্যাগিংসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সচেষ্ট আছেন।

ক্যাম্পাসে আসা পরীক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্ট স্মরণ চত্বরে ‘পথ নির্দেশক ম্যাপ’ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে পরীক্ষার কেন্দ্র ছাড়াও, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিভিন্ন আবাসিক হল, প্রার্থনাস্থল, এটিএম বুথ ডকঘর, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, অস্থায়ী শৌচাগার, অস্থায়ী গাড়ি পার্কিং, রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান এবং ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন জেলাভিত্তিক এসোসিয়েশনগুলোর পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় নানা রকম সহযোগিতার ব্যবস্থা করে।’

শাটল বিপর্যয় সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরীণ আখতার বলেন, ‘সোমবার রাতে (১৫মে) অতি বৃষ্টির কারণে শাটল ট্রেনে কিছু সমস্যা হয়েছিলো। ফলে ট্রেন ছাড়তে ১৫ মিনিট দেরি করায় পরীক্ষাও ১৫মিনিট পর শুরু হয়েছে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ক্যাম্পাসে।’

প্রসঙ্গত, দ্বিতীয়দিন (১৭ মে) পরীক্ষা দেবেন ৩৭ হাজার ৩২৯ জন। ১৮ ও ১৯ মে ‘বি’ ইউনিট, ২০ ও ২১ মে ‘সি’ ইউনিট এবং ২২ ও ২৩ মে ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২৪ মে ‘বি -১’ উপ-ইউনিট ও ২ মে ‘ডি-১’ উপ-ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বরাবরের ন্যায় এ বছরও বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে। যেখানে মোট ১২০ নম্বরের মধ্যে বহুনির্বাচনী ১০০ নম্বর এবং এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ২০ নম্বর থাকবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য দশমিক ২৫ নম্বর কেটে নেওয়া হবে। দ্বিতীয়বার ভর্তিচ্ছুদের মোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর কেটে নেওয়া হবে।