বাওয়ার বাজিমাত

নিজস্ব প্রতিবেদক »

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বেলা ১২টা। বিদ্যালয়ের বারান্দায় পাঁয়চারি করছেন শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবক। আশানুরূপ ফলাফল লাভ হবে তো? এই ভেবে কপালে ভাঁজ কারও কারও। দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ক্লান্তিকর স্মৃতি আওড়াচ্ছেন কেউ কেউ। এমন সময় সংবাদ এলো চট্টগ্রামের ফলাফলে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। সঙ্গে সঙ্গে বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ে কমলা সাদার শিক্ষার্থীরা।

গতকাল প্রকাশিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে চট্টগ্রাম বোর্ডে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান তিনটি বালিকা বিদ্যালয়ের। যথাক্রমে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

চট্টগ্রামের সেরা স্কুলের তালিকায় প্রথম হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আরিফ উল-হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমার একার কোনো কৃতিত্ব না। এখানে প্রথমে অভিভাবকের আন্তরিকতা, ছাত্রীদের একাগ্রতা এবং আমার শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সমন্বয়ে আজকের এ ফলাফল।’

গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থী মাহমুদা তারান্নুম ইশফা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘অনেক আনন্দ হচ্ছে। কয়েকদিন আগে থেকে অনেক টেনশন হচ্ছিলো। করোনার পরবর্তীতে পড়ালেখাকে গুছিয়ে নিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এতোটা করতে পারতাম না। বাবা-মা আমাদের সকল প্রয়োজনীয়তার দিকে সবসময় নজর রেখেছেন। আমাদের এ ফলাফল তাদের পরিশ্রমের ফসল।’

রুবিনা শারমিন নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আশানুরূপ ফল পেয়েছি। করোনা পরবর্তীতে এবারের পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে কোচিং-এর ব্যবস্থা সম্ভব না হলেও, সেই এক্সট্রা যতœটা বাসায় নিয়েছি। শিক্ষকরা এতো বেশি আন্তরিকভাবে তাদের পড়ালেখার তদারকি করেছেন, এজন্য আমার মেয়ে আজ ভালো ফল পেল। এজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নগরীর দীর্ঘদিন শীর্ষে থাকা ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪৭৯ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে ৪৬৬ জন। একইভাবে চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী শতভাগ পাসের মাধ্যমে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫৫ জন।

এ নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জাফর সাদেক বলেন, ‘মেয়েরা পড়ালেখার ব্যাপারে অনেক বেশি প্রমিজিং। তারা যথাযথভাবে শিক্ষকদের গাইডলাইন ফলো করে। তারা পড়ালেখা ছাড়াও অন্যান্য এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসেও সমান পরিশ্রমী এবং আন্তরিক। সার্বিকভাবে সরকার, সমাজ, পরিবার এবং শিক্ষকেরা যদি মেয়েদের যতœ নেয় ও সহযোগিতা করে, তাহলে সর্বক্ষেত্রেই তাদের সাফল্য অনিবার্য।’