বাংলা চলচ্চিত্রের পালে হাওয়া

হুমাইরা তাজরিন »

কিছু বছর আগেও হলে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখতে ভুলেই ে গিয়েছিল দর্শক। গতানুগতিক ধারার বাইরে ভালো গল্প না থাকা, প্রচারের অভাব, হল সংকট, হলের পরিবেশ ইত্যাদি ছিল তার কারণ। কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেই পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা দর্শকদের হলে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখার অনুরোধ জানাতেন। এরপরও দেখা যেতো খাঁ খাঁ করছে হলগুলো। যার দরুণ অন্তত হতাশায় হল মালিকেরা দুই তৃতীয়াংশ হল বন্ধ ঘোষণা করে।

একসময় চট্টগ্রামে ২৭টির বেশি হল থাকলেও বর্তমানে ঠেকেছে মাত্র ২টিতে। কিন্তু সেই খরা যেন কেটেছে। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ থেকে শুরু করে রায়হান রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তির সময় পর্যন্ত ভালো কাজগুলোর যথাযথ প্রচার দর্শকদের পুনরায় হলে টানছে বলে জানাচ্ছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।

এবারের ঈদুল আযহায় মুক্তি পাওয়া ৫টি ছবি ‘প্রিয়তমা’, ‘প্রহেলিকা’ , ‘সুড়ঙ্গ’, ‘লালশাড়ির’ ও ক্যাসিনোর মধ্যে ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ বেশ ব্যবসা সফল হয়েছে বলে জানাচ্ছেন হল মালিকেরা। এরপরেই আছে ‘প্রহেলিকা’ এবং সবশেষে সরকারি অনুদানে নির্মিত ছবি ‘লালশাড়ি’ ও ‘ক্যাসিনো।

‘প্রিয়তমা’ চলচ্চিত্রটি মাল্টিপ্লেক্সসহ দেশের ১০৭টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটির নির্মাণ ব্যয় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং আয় এখন পর্যন্ত ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ‘সুড়ঙ্গ’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় মাল্টিপ্লেক্সসহ ২৮টি সিনেমা হলে। এর নির্মাণ ব্যয় ২ কোটি এবং মুক্তির পর ৭দিনে কেবল সিনেপ্লেক্স থেকে আয় করে আড়াই কোটি টাকা। ‘প্রহেলিকা’ চলচ্চিত্রটি মোট ৮টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। এর নির্মাণ ব্যয় আনুমানিক কোটি টাকা। ‘ক্যাসিনো’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ১৬টি একক হলে এবং ‘লালশাড়ি’ মুক্তি পেয়েছে ১২টি হলে।

নগরীর ফিনলে স্কয়ারের সিলভারস্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে ও বালি আর্কেডের স্টার সিনেপ্লেক্সে একযোগে ২৯ জুন হতে চলছে ৩টি সিনেমা ‘প্রিয়তমা’, ‘প্রহেলিকা’ এবং ‘সুড়ঙ্গ’।

প্রিয়তমা
দীর্ঘদিন যাবত বাংলা চলচ্চিত্রে রাজত্ব করছেন নায়ক শাকিব খান। এই নায়কের রয়েছে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। তবে এবার সব সিনেমা হলের সবধরনের দর্শকের আগ্রহ জমা করেছেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মেকাপ লুক প্রকাশ করে মুক্তির আগেই সাড়া ফেলেছেন এই নায়ক। আরো বেশ কিছু কারণে চট্টগ্রামের হলগুলোতে তার অভিনীত চলচ্চিত্র ‘প্রিয়তমা’ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

নিজের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে ‘প্রিয়তমা’ পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ। এর আগে তিনি ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন। ‘প্রিয়তমা’ চলচ্চিত্রটি ভার্সেটাইল মিডিয়ার অধীনে প্রযোজনা করেন আরশাদ আদনান। চলচ্চিত্রটির অপূর্ণাঙ্গ কাহিনী লিখেছেন ফারুক হাসান। ২০১৫ সালে যিনি সাগরে নেমে নিখোঁজ হন। তাঁর লেখা দুটি কাহিনীকে একত্র করে এতে চিত্রনাট্য ও সংলাপ সংযোজন করে গল্পকে পূর্ণাঙ্গ রূপদান করেন হিমেল আশরাফ।

চলচ্চিত্রটির দৃশ্যায়ন হয়েছে ঢাকা, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজারে। অভিনয় করেছেন শাকিব খান, ইধিকা পাল, শহীদুজ্জামান সেলিম, এলিনা শাম্মী, ডন, লুৎফুর রহমান খান সীমান্ত, লুৎফুর রহমান, শহিদ-উন-নবী, কাজী হায়াৎ প্রমুখ। ‘প্রিয়তমা’ চলচ্চিত্রে রয়েছে ৪টি গান। ‘কুরবানী-কুরবানী’ গানটি সুর, সংগীত সংযোজন, রচনা ও কণ্ঠ দিয়েছেন আকাশ সেন। ‘ও প্রিয়তমা’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন বালাম ও সোমনুর মনির কোনাল। আসিফ ইকবালের লেখা এই গানটির সুর ও সংগীত সংযোজন করেছেন আকাশ সেন। ‘ঈশ্বর’ গানটিতে প্রিন্স মাহমুদের সুর ও সংগীত সংযোজনে, সোমেশ্বর অলির কথায় কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী রিয়াদ। জাহিদ আকবরের কথায় সাজিদ সরকারের সুরে ‘গভীরে’ নামের গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন রেহান রসুল ও প্রিয়াংকা গোপ। চলচ্চিত্রটিতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শাকিবখানকে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধের লুকে দেখা যাচ্ছে। যার পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে জানা যায়। স্ক্রিনে লুকটি প্রায় ৭ মিনিট দেখানো হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, বাংলা সিনেমায় এই ধরনের ব্যয়বহুল লুক পূর্বে দেখা যায়নি। ১৭ জুন লুকটি শাকিব খানের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ প্রশংসিত হয়। দেশের প্রায় ১০৭টি সিনেমা হলে একযোগে চলছে ‘প্রিয়তমা’ চলচ্চিত্রটি। এছাড়া ৭ জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৪২টি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে।

সিলভারস্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে প্রিয়তমা দেখে ফারজানা মালা বলেন, ‘শাকিব খানের চলচ্চিত্র আগে তেমন দেখা হয়নি। তবে এবার দেখে মনে হলো বাংলা চলচ্চিত্র গতানুগতিকতা ভেঙে নতুনত্বের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছে। শাকিব খানের লুক বেটার ছিল, ইধিকার ফানি অভিনয় ভালো লেগেছে। তাছাড়া উসমান নামের একটা চরিত্র আছে তার অভিনয়ও ভালো ছিলো।’

তিলক বড়–য়া নামের আরেকজন দর্শক বলেন, ‘কুরবানী-কুরবানী’ গানটা সময়ের সাথে একেবারে হিট। ‘ঈশ্বর’ গানটিও আমার অনেক ভালো লেগেছে। তবে শাকিব খানের উচিত প্রেমের চলচ্চিত্র থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্নধর্মী সিনেমা করা। কেননা, বাংলাদেশে নানা ধরনের চলচ্চিত্র বর্তমানে হচ্ছে এবং দর্শকেরা সেগুলো সাদরে গ্রহণও করছে। সে জায়গায় তার আগের প্যাটার্নে পড়ে থাকা সাজে না। ’

রবিউল হোসেন রাকিব নামের একজন দর্শক বলেন, ‘শাকিব খানের অভিনয়ে তেমন একটা কোনো পরিবর্তন আসেনি। তিনি আগে যে ধরনের অভিনয় করতেন সেটাই করেছেন। তবে লুকটা অনেক বেশি ভালো হয়েছে। সে অনুযায়ী পার্শ¦ চরিত্রগুলো আমার মনে হয় অনেক ভালো অভিনয় করেছে।

সুড়ঙ্গ
আফরান নিশো অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সুড়ঙ্গ’। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন রায়হান রাফী। চিত্রনাট্য লিখেছেন নাজিম উদ দৌলা। প্রযোজনা করেছেন রেদওয়ান রনি ও শাহরিয়ার শাকিল। ২০১৪ সালে কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে দীর্ঘ এক সুড়ঙ্গ খুড়ে সোহেল নামের একজন প্রায় ১৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা চুরি করে নেয়। চলচ্চিত্রের ঘটনার সাথে কিশোরগঞ্জের ঘটনার মিল পাচ্ছেন অনেকেই। কিশোরগঞ্জের ঘটনায় ২ বছর যাবত সুড়ঙ্গ খুড়লেও চুরির মাত্র ২ দিনের মধ্যেই সোহেল ধরা পড়ে। ‘সুড়ঙ্গ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো, তমা মির্জা, সানজাত হাসান তুহিন, নুসরাত ফারিয়া, শহীদুজ্জামান সেলিম, মোস্তফা মন্ওয়া, বাইজিদ হাসান প্রমুখ। চলচ্চিত্রটির ‘কলিজা আর জান’ গানের সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন আরাফাত মহসিন, গানের কথা লিখেছেন রাসেল মাহমুদ ও আরাফাত মহসিন, কণ্ঠ দিয়েছেন দিলশাদ নাহার কনা। ‘গা ছুঁেয় বলো’ গানটির কথা লিখেছেন তানজীব সরোয়ার, সুর দিয়েছেন তানজীব সরোয়ার এবং গেয়েছেন অবন্তী সিঁথি ও তানজীব সরোয়ার, সংগীত আয়োজন করেছেন সাজিদ সরকার। চলচ্চিত্রটির চলচ্চিত্রটির দৃশ্যায়ন হয় সিলেটের সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রামে।

১১ জুলাই সিলভারস্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে ‘সুড়ঙ্গ’ দেখতে এসে আনোয়ার সিদ্দিকী নামের একজন দর্শক বলেন, ‘চলচ্চিত্রটির নির্মাণ অনেক ভালো হয়েছে। সবাই খুব ভালো অভিনয় করেছে। তাছাড়া রায়হান রাফীর চলচ্চিত্রের গল্প বাস্তব ঘটনার সাথে মিলে যাচ্ছে। নতুন গল্প তাঁর কাছ থেকে কম পাচ্ছি। যেহেতু তার কাস্টিং, মেকিং ভালো; নতুন গল্প নিয়ে তার ভাবা উচিত।’

প্রহেলিকা
রহস্যে ঘেরা গল্পের চলচ্চিত্র ‘প্রহেলিকা’ নিয়ে ৮ বছর পর বড় পর্দায় হাজির হয়েছেন অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন দর্শকদের ‘প্রহেলিকা’ দেখায় উদ্বুদ্ধ করার অন্যতম কারণ। প্রিয় অভিনেতাকে বহুদিন পর বড় পর্দায় দেখার জন্য অনেকেই টিকিট কেটে ‘প্রহেলিকা’ দেখছেন। চলতি বছরের ২৯ জুন ঈদুল আযহায় মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটির নামের মতোই রহস্যে ঘেরা বলছেন দর্শকেরা।

সংগীত ও রহস্যে ঘেরা ‘প্রহেলিকা’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। এর কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পান্থ শাহরিয়ার। চিত্রগ্রহণ করেছেন সুমন চৌধুরী এবং সম্পাদনা করেছেন রমজান আলী। আবহ সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন সাহা।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার সৌজন্যে চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছেন জামাল হোসেন। এতে অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ, শবনম বুবলী, নাসির উদ্দিন খান, রাশেদ মামুন সেতু, রহমত উল্লাহ , সাবিহা জামান। সিনেমাটি দৃশ্যায়ন করা হয়েছে সিলেটে।

৯ জুলাই নগরীর ফিনলে স্কোয়ারে সিলভারস্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে ‘প্রহেলিকা’দেখা শেষে নাঈমা জান্নাত নামের দর্শক বলেন, ‘মাহফুজ আহমেদকে অনেকদিন পর বড় পর্দায় দেখার জন্য এলাম। ভালো লেগেছে। প্রতি পরতে পরতে রহস্য ছিলো। শবনম বুবলীর অভিনয়ও ভালো ছিলো। তবে শেষে অনেক খারাপ লেগেছে। শেষটা অনেক কষ্টের ছিল।’

আরাফাত আদনান নামের একজন দর্শক বলেন, ‘গতানুগতিক বাংলা সিনেমায় যে ধরনের গল্প হয় ‘প্রহেলিকা’ তারচেয়ে ভিন্ন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই রহস্য। তবে শেষের রহস্যটা আরো ক্লিয়ার করলে ভালো হতো। লোকেশন অনেক সুন্দর ছিলো। ’

সিনেমা হল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
সিলভারস্ক্রিন সিনেপ্লেক্সের অপারেশন ম্যানেজার সালাউদ্দিন পারভেজ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমাদের অনলাইনেও টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে, যার ফলে দর্শকরা ঘরে বসে নিজের সিট নিশ্চিত করছেন। আমাদের ফেসবুক পেইজে দেওয়া লিংকে ঢুকে টিকিট নিশ্চিত করা যাচ্ছে। শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’ ও আফরান নিশোর ‘সুড়ঙ্গে’ বেশ সাড়া পাচ্ছি। পাশাপাশি অন্য চলচ্চিত্রগুলোরও বেশ দর্শক রয়েছে। ‘হাওয়া’ এবং পরাণের সময় যে ধরনের সাড়া লক্ষ করা গেছে এবারও সেকরম। ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রটি মুক্তির ছয় মাস পরও আমরা শো রেখেছি। সব মিলিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে এসেছে বলা যায়।’

চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের বক্তব্য
বর্তমানে দর্শকদের হলমুখী হওয়া এবং চলচ্চিত্রে সুসময়ের হাওয়া প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র কেন্দ্র চট্টগ্রামের উপদেষ্টা প্রদীপ দেওয়ানজী বলেন, ‘একেবারে যে সোনালী দিন ফিরে এসেছে তা বলা যায় না। কিন্তু একটা কথা নিশ্চিত যে, গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মনপুরা থেকে বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গন পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এরপর ‘হাওয়া’, ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ এবং ‘সাঁতাও’ এর মতো চলচ্চিত্র আমরা পেয়েছি। এর কারণ হিসেবে মনে করি, বাংলা চলচ্চিত্র বেশ কয়েকজন তরুণ নির্মাতাকে পেয়েছেন যারা গতানুগতিক গল্পের বাইরে কাজ করছেন। তবে কেবল বাংলার দর্শকদের সাড়া পেলে চলবে না, বিশ্বমানের সিনেমা নির্মাণের কথাও ভাবতে হবে। যেমন চট্টগ্রামের ছেলে সাদ একটা সিনেমা করেছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। খুব ভালো কাজ হয়েছে সেটা।’

দর্শকদের হলমুখী হওয়াকে চলচ্চিত্র সংসদের পঞ্চাশ বছরের আন্দোলনের ফসল হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রাম ফিল্ম ইনস্টিটিউট’র সভাপতি শৈবাল চৌধুরী। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘একটি শিক্ষিত প্রজন্ম সিনেমা নির্মাণ করছে। তারা দেশি-বিদেশি ফিল্ম দেখে তরুণদের আগ্রহের জায়গাটি অনুধাবন করতে পেরেছেন এবং সে-অনুযায়ী সিনেমা বানাচ্ছেন। এতে করে ভিন্নধর্মী গল্পে নতুন নতুন ফিল্ম তৈরি হচ্ছে এবং মানুষ হলমুখী হচ্ছে। দর্শকদের মধ্যে তারুণ্যের প্রাধান্য লক্ষণীয়। বর্তমানে চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মনের চাহিদা প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সরকার ফিল্ম তৈরিতে অনুদান দেওয়া তথা সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপও অন্যতম কারণ।’ তবে তিনি সিনেমা হলের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে সারা দেশে ছোট ছোট হল নির্মাণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

এ বিষয়ে চলচ্চিত্র কেন্দ্র চট্টগ্রামের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল বলেন, ‘দেখুন ভারতে হাজার হাজার শত শত বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড়ো বিনোদন মাধ্যম চলচ্চিত্র অথচ আমাদের সিনেমা হল আছে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি। একটা বড়ো জনগোষ্ঠী এই বিনোদন ব্যবস্থার বাইরে। রাজশাহী শহরে একটিও সিনেমা হল নেই। ভাবা যায়? সরকারি উদ্যোগে ১০টি জেলা শহরে এবং প্রত্যেক জেলায় ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সিনেমা হল নির্মাণ করতে হবে। ভালো সিনেমা নির্মাণে লোনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্মাতাদের কাজের স্বাধীনতা দিতে হবে যাতে যে যার মতো বিষয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারে।

অনুবাদক আলম খোরশেদ বলেন, ‘কিছু কিছু ভালো কাজ হচ্ছে। নির্মাতারা সময়টাকে ধরতে পারছে। তাছাড়া নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, ক্যামেরা, আলো, রঙ এসব বিষয়টাতো আছেই। সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে এখন একটা ভালো সময় চলচ্চিত্রের জন্য। তবে আফ্রিকা, মিডল ইস্টে এর চেয়ে ভালো ছবি হয়। আমাদেরও কেবল বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য না, বিশ্বমানের কাজ করার সময় এখন। আগে নির্মাতাদের সাথে গায়ক, কবিÑসাহিত্যিকদের সম্পর্ক থাকতো। তারা আলাপ আলোচনা সমালোচনার মাধ্যমে দর্শকদের ভালো ছবি উপহার দিতেন। যেগুলো পরিবার নিয়ে অনায়াসে দেখা যেতো। কিন্তু একটা সময় দেখা গেলো নোংরা বাণিজ্যিক ছবিগুলো এতো বেড়ে গেলো যে হল থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিটাকে একবারে বিতাড়ন করা হলো। এখন আগের মতো উচ্চশিক্ষিত সংস্কৃতিবান নির্মাতা কম। সেসরকম সম্পর্কও গড়ে উঠেনা। বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছে সমাজে, জীবন যাপন কঠিন হয়ে গেছে। এ ধরনের সম্পর্ক তৈরির জন্য কেউ সেভাবে উদ্যোগ নেন না।’

তিনি চলচ্চিত্রের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘বন্ধ হলগুলো চালুর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। হল না থাকলে তো একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার দর্শক ব্যতীত অন্যরা বিনোদন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না। হলের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন যাতে সব শ্রেণির দর্শকেরা হলে এসে সিনেমা দেখতে পারে। এছাড়া সব মানুষের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে যেমন শিশুতোষ সিনেমা, কমেডি সিনেমা, রোমান্টিক সিনেমা, রিয়েলেস্টিক সিনেমা ইত্যাদি। ’