বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ

১০ দফা দাবিতে ধর্মঘটে নৌযান শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বেতন ভাতা বৃদ্ধি, নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্রসহ ১০ দাবিতে অর্নিদিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে নৌ যান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। ফলে অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকারসহ সকল ধরনের জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাত ১২টা থেকে কর্ণফুলীর ১৭টি ঘাট এবং বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য ওঠানামা বন্ধ ছিলো।
এক বিজ্ঞপ্তিতে শ্রমিক নেতারা জানান, প্রতিটি দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে। সেই তুলনায় জাহাজ শ্রমিকদের বেতন বাড়েনি। যার ফলে শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিভাগীয় আহ্বায়ক নুুরুল হক বলেন, বেতন ভাতা বৃদ্ধি, ভারতগামী যাত্রীদের ল্যান্ডিং পাস প্রদানসহজ বেশ কয়েকটি দাবিতে আমরা শনিবার রাত থেকেই আন্দোলন করে আসছি। দাবি আদায়ে আমাদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ে কোনো আশ্বাস কিংবা উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সচিব এম .এ. রনি বলেন, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা শুক্রবার ও শনিবার সংশ্লিষ্ট নেতাদের সাথে সমঅধিকার কার্যালয়ে দুই দফায় মিটিং করি। সেখানে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। যতদিন দাবি আদায় না হবে ততদিন আমাদের ধর্মঘট চলমান থাকবে।
আমাদের সাথে প্রশাসনের যোগাযোগ হয়েছে। তারা আমাদের সাথে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্ত কখন সে বৈঠক হবে জানান নি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের ধর্মঘট নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ এটা সারা বাংলাদেশের শ্রমিকদের দাবি। এটা চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে জড়িত নয়। এই সিদ্ধান্ত আসবে ঢাকা থেকে। সম্ভবত শ্রম মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে মিটিং চলছে। আশা করি ভালো সিদ্ধান্ত শীঘ্রই আসবে।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম ভূইয়া বলেন, মজুরি পুনঃনির্ধারণ, মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ন্যূনতম ১০ লাখ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে মধ্যরাত থেকে সারাদেশে তাদের এ কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।
‘সকল প্রকার নৌযান শ্রমিকেরা এ ধর্মঘটের অর্ন্তভুক্ত। গত বছরের জুন মাসে নতুন মজুরি দেওয়ার কথা থাকলেও দেড়বছরে তা হয়নি। আমরা আমাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করলেও কিছু না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গিয়েছি।’
শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের দাবি যৌক্তিক। তেলের দামের বৃদ্ধির সঙ্গে নৌযানের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের এখন কোনঠাসা অবস্থা। তাদেরও তো বাঁচতে হবে।’
শ্রমিকদের অন্য দাবিগুলো হলো-
শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ। ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস দিতে হবে।বাল্কহেডের রাত্রীকালীন চলাচলের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে।বাংলাদেশের বন্দরসমূহ থেকে পণ্যপরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ড ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙর থেকে সারাদেশের নৌরুটে অসংখ্য লাইটারেজ জাহাজ পণ্য আনা-নেওয়া করে। এসব জাহাজে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারের বেশি। আমদানি করা ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য নিয়ে বহির্নোঙ্গরে আসা মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজে) থেকে পণ্য খালাস হয় লাইটারেজ জাহাজে। এরপর নৌরুটসমূহে বিভিন্ন গন্তব্যে এসব পণ্য নিয়ে যায় লাইটারেজ জাহাজগুলো।