‘বঙ্গবন্ধু তুমি অজর-অমর’ যে-কবিতা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি রাখে           

আবুল কালাম বেলাল :

বিবিসি’র জরিপে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’র স্বীকৃতি পান। কীভাবে, কেন তিনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি তার ইতিবৃত্ত ও ব্যাখ্যা ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ত্রিকালের বিষয়। তাঁকে নিয়ে যেমন কালজয়ী, জনপ্রিয় এবং সমাদৃত লেখা হয়েছে, ঠিক তেমনি পাঠও হয়েছে অসংখ্যবার। বঙ্গবন্ধু মানে মুগ্ধপাঠ। তাঁকে নিয়ে তো বটে তাঁর নিজের রচনাও অবিরাম পাঠযোগ্য। বিশেষ করে যারা রাজনীতিচর্চা করেন তাদের জন্য অবশ্যই পাঠ্য বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’সহ প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ। কিন্তু এখানেই সীমাবদ্ধ নন বঙ্গবন্ধু। সিলেবাসধারী শিক্ষার্থীদের কাছেও তিনি বিভিন্নভাবে পাঠ্য এখন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো ছড়া-কবিতাও অজস্র লেখা হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থও। এখনও থেমে নেই সৃষ্টি। তার একটি ‘বঙ্গবন্ধু তুমি অজর-অমর’।

এটি একটি কিশোর কবিতাগ্রন্থ। রাশেদ রউফ এর স্রষ্টা। কেন কবিতাটি নির্ধারণ করা? তাঁর তো আরো অনেক শ্রেষ্ঠ কবিতা আছে। যেমন : ‘আব্বুকে মনে পড়ে’, ‘মানবতা’, ‘বাংলাদেশ তুমি কেমন আছো’, ‘আয় রৌদ্র আয় শান্তি’, ‘হাতের মুঠোয়’, ‘ছবির মতো দেশ’, ‘মাঠ মানে তো অনেক কথা-স্বাধীনতা’, ‘বৃষ্টি নামে মনে’, ‘ধানের গানে প্রাণের বাঁশি’, ‘একটি বাংলাদেশ’, ‘মা’, ‘শব্দরা পায় স্বাধীনতা’, ‘আনন্দ সাম্পান’ প্রভৃতি। উল্লিখিত কবিতাটির শিরোনামে একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। এখানে শিরোনামাঙ্কিত গ্রন্থ নয়, নামকবিতাটিই আমার যৎকিঞ্চিৎ আলোচ্য বিষয়। যদিও গ্রন্থটিতে আরো অনেক উল্লেখযোগ্য ছড়া-কবিতা রয়েছে। ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘অন্যগ্রহ’, ‘শেখ মুজিবের ডাক’, ‘মুক্তির টানে’, ‘আগল ভাঙা পাগল হাওয়া’, ‘ধানমন্ডির বুকে’, ‘মানুষ চেনেনি তাঁকে’, ‘মুজিবের ছবি’, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনালি মুখখানি’, ‘আমাদের আছে শেখ মুজিবুর’, ‘ইতিহাসে’ প্রভৃতি। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ‘একাত্তরের গল্পগাথা’, ‘স্বাধীনতা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’, ‘প্রিয় স্বাধীনতা’, ‘জয় বাংলার ডাকে’ ইত্যাদি। এত এত আবেগমথিত, শব্দমাধুর্যে, নিপুণ ছন্দে নির্মিত কবিতার মধ্য থেকে ‘বঙ্গবন্ধু তুমি অজর-অমর’ কে বাছাই করা কেন? এটি একটি অনবদ্য কবিতা। এর বিষয়-বক্তব্য, শব্দচয়ন, বাকপ্রতিমা, নির্মাণশৈলী, ভাবপ্রতিভা সব মিলিয়ে চমৎকার। ইতিহাস আশ্রিত অনুষঙ্গ মুকুলিত হওয়ায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে কবিতাটি অনন্য। প্রথমে পড়ে নেয়া যাক কবিতাটি :

 

উপমায় বিশেষণে নও তুলনীয়

সকলের ভালোবাসা, সকলের প্রিয়

দেশের স্রষ্টা তুমি আলো-বাতিঘর

বঙ্গবন্ধু তুমি অজর অমর।

 

অসীম সাহস বুকে তুমি দুর্জয়

বাংলার তারুণ্য-তুমি হিমালয়

তোমার মৃত্যু নেই, তুমি অক্ষয়

তোমাকে সামনে রেখে থাকি নির্ভয়।

 

যুগে যুগে তুমি আসো বাংলাদেশে

কখনো বা ঈশা খাঁ বা বন্ধুবেশে

কখনো সিরাজ হয়ে, কি’বা তিতুমীর

কখনো মুক্তিদাতা-বিপ্লবী বীর।

 

কখনো সূর্য সেন, লোকনাথ বল

কখনো বা ক্ষুদিরাম, মুখ উজ্জ্বল

কখনো কবিতা তুমি রবিঠাকুরের

ছায়া-মায়া সত্যের বট-পাকুড়ের।

কখনো বা নজরুল, বিদ্রোহী সুর

বজ্রকণ্ঠ তুমি শেখ মুজিবুর।

 

যারাই তোমার বুকে চালিয়েছে গুলি

মীর জাফরগুলিকে কী করে যে ভুলি

এজিদের দোসর সে ফারুক-ডালিম

সাথে ছিলো আরো যত দস্যু জালিম।

কিন্তু তোমার নেই মৃত্যু অমন

তোমাকে রেখেছে মনে এই জনগণ

পাখির কণ্ঠ থেকে ভেসে আসে সুর

জাতির জনক তুমি শেখ মুজিবুর।

 

ভোরের শিশির ঝরে তোমার নামে

অঝোরে বৃষ্টি ঝরে- মেঘেরা থামে

নদীতে জোয়ার আসে, শুনি কলতান

গান ভাসে চারদিক, ভরে ওঠে প্রাণ।

 

কত পথ আছে দেশে, আছে শত মত

তোমার জন্য করি নতুন শপথ

তোমার কণ্ঠে জাগে এই চরাচর

বঙ্গবন্ধু তুমি অজর-অমর।

(বঙ্গবন্ধু তুমি অজর-অমর)

 

রাশেদ রউফ কবিতাটি এমনভাবে সাজিয়েছেন যার আদিভাগ বঙ্গবন্ধুর গুণপ্রীতির চকিতচিত্র, প্রথম মধ্যভাগে গুণমাধুর্যের প্রভাবধারার প্রতিফলন, দ্বিতীয় মধ্যভাগে বিপ্লব-সংগ্রাম-মুক্তির ইতিহাস ইঙ্গিত, তৃতীয় মধ্যভাগে প্রিয় নেতার দৈহিক নশ^রতার শোকগাথা, চতুর্থ ভাগে সৌন্দর্যমথিত নবজাগরণকথন, শেষপ্রান্তে নতুন শপথে দুষ্টুদমনের উজ্জীবিত কণ্ঠÑ শব্দ, ছন্দ, বাক্য আর পরিমিত চিত্রকল্পের ব্যঞ্জনায় ভরপুর। মুনশিয়ানায় নির্মিত এ কবিতা।  এ যে কাউকে মোহিত করবে, প্রাণিত করবে। সর্বজনপাঠ্য এ কবিতার পরতে পরতে যে কথামালা বাক্সময় করেছেন কবি, এক কথায় তা অপূর্র্ব। বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্য, চারিত্র্যগুণ চিত্রিত এ কবিতার আদি-অন্ত ঠিক অহোরাত্র ঘটনার পরম্পরা।

কবিতাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মূল্য যথেষ্ট। তাই এর মূল্যায়ন হওয়াও জরুরি। এ কবিতা পাঠ্যপুস্তকভুক্ত করে আগামী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার দাবি রাখে। বলা যায়, সুসংহত ও অনন্য কবিতাটি সবার কাছে সমাদৃত হবে নির্দ্বিধায়।