ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা যাচ্ছে না

কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও নগরী পরিপূর্ণভাবে পরিচ্ছন্ন নয়

৬ষ্ঠ পরিষদের ১০ম সভায় মেয়র

‘নগরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, সেগুলো যেন ঝামেলামুক্ত থাকে ও জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় এবং নির্বিঘ্নে কাজগুলো শেষ হতে পারে সেজন্য সব সেবা সংস্থার সমন্বয় অত্যাবশ্যক।’
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনে কে বি আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চসিক ৬ষ্ঠ পরিষদের ১০ম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী একথা বলেন।
তিনি খুব শিগগিরই নগরীর ফুটপাতগুলোকে অবৈধ দখলদারমুক্ত করে জন চলাচলে উপযুক্ত করা হবে বলেও ঘোষণা দেন।
তিনি নগরে বাজারগুলোকে পলিথিনমুক্ত করার জন্য যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, তা সফল করতে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া পলিথিনে পরিবর্তে পাটের বা কাপড়ের তৈরিকৃত থলে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি নগরে মশার উপদ্রব যে হারে বেড়েছে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য মশক নিধনের কার্যকর ওষুধ ছিটানোসহ নালা-নর্দমা, পরিকল্পিত ও সঠিক তদারকির মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতার শুরু হয়েছে বলে সভাকে অবহিত করেন। যে সকল রাস্তা গলি ও উপগলি বৃষ্টিজনিত কারণে খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে তা প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার এবং যেখানেই খানা-খন্দক দৃশ্যমান হবে তা দ্রুততার সহিত সংস্কারের জন্য প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে যেখানে খাল, নালা মাটি ভরাট হয়ে জলজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে এই শুষ্ক মৌসুমে মাটি উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনে চসিকের জনবলের বাইরেও শ্রমিক নিয়োগ করে এই কাজটি শেষ করতে নিজ নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান।
মেয়র আরো বলেন, পরিচ্ছন্ন নগরী দেখতে চাই। পরিচ্ছন্ন বিভাগে কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করার পরেও চট্টগ্রাম নগরী পরিপূর্ণভাবে পরিচ্ছন্ন নগরী হয়ে উঠতে পারেনি, যা কোন অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কাজে যারা নিয়োজিত আছে তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে বলেন, কোন ধরনের গাফিলতি দৃশ্যমান হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, ফুটপাতগুলোকে যতবারই দখলমুক্ত করা হয়েছে তা ততবারই আবারও বেদখল হয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনের সাথে এব্যাপারে আলাপ হয়েছে। তারা আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।
মেয়র বিজয়দিবসের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বুধবার থেকে বিজয়ের মাস শুরু হচ্ছে। এই বিজয় মাসটির তাৎপর্য অন্য বিজয় মাসের চাইতে ভিন্ন। এই বছরে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী একসাথে পালিত হবে। চট্টগ্রাম সবসময়ই সবকিছুতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবারও সে দৃষ্টান্ত চসিক স্থাপন করবে। প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়, চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোকে নান্দনিক আলোকসজ্জায় সজ্জিতকরণ, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডার ও খেতাবপ্রাপ্ত ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে বলে মেয়র সভাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন।
সভায় সিটি করপোরেশনের মার্কেট ও দোকানসমূহে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন, আবাসিক এলাকায় অনুমতিবিহীন গেট ও স্লেভ অপসারণ, সৌন্দর্যবর্ধনে নীতিমালা প্রণয়ন, বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, নগরীর সবুজায়ন উদ্ধারকরণসহ সাতটি রাস্তা সম্প্রসারণ, চসিক উন্নয়ন কাজ চলাকালে নির্ধারিত স্থানে সাইনবোর্ড স্থাপন, যান্ত্রিক বিভাগের গাড়িগুলো মেরামতের জন্য মাদারবাড়িতে শেড তৈরি করাসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি