প্রস্তুত জেটি, ইয়ার্ড নির্মাণে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা

চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল

ভূঁইয়া নজরুল »

জাহাজ ভেড়ানোর জন্য প্রস্তুত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) জেটি। এখন অপেক্ষা শুধু ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার। গত ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ করার ঘোষণা দেয়া হলেও এখন নতুন লক্ষ্যমাত্রা জুন। তবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতি নয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু হবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল।

গত সপ্তাহে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদী তীরের অংশে জেটি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। ড্রাইডক প্রান্ত থেকে বোট ক্লাবের আগ পর্যন্ত অংশে নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের জেটির দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার। ড্রাইডকের পরে ও বোট ক্লাবের পূর্বে জহুরুল হক বিমান ঘাঁটি ও কর্ণফুলী নদীর মধ্যবর্তী ২৬ একর জায়গায় গড়ে তোলা এই কনটেইনার টার্মিনালে ইয়ার্ড নির্মাণের লক্ষ্যে চলছে কাজ। এছাড়া বিমানবন্দর সড়কে যাতায়াতের জন্য ইতিমধ্যে একটি ওভারপাসও নির্মাণ করা হয়েছে। ওভারপাস দিয়ে যাওয়ার সময় পিসিটির অসাধারণ দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।

চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন জেটিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়বে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে। নির্মাণাধীন এই টার্মিনালের ৪০০ মিটার দীর্ঘ জেটি প্রায় প্রস্তুত।

গত শনিবার পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেটি ও ইয়ার্ড নির্মাণে কাজ করছে শ্রমিকরা। ইতিমধ্যে ইয়ার্ডের উপর দিয়ে যান চলাচলের জন্য ওভারপাসটিও চালু হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ২৬ একর জায়গাজুড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ২০১৭ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। গত বছরের শুরুতে চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে তা ডিসেম্বরে চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ডিসেম্বরেও তা সচল করতে না পারার পর এবার জুনে চালুর ঘোষণা দেয়া হলো। এবিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘পিসিটি ইতিমধ্যে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য প্রস্তুত। তবে ইয়ার্ড ফ্যাসিলিটি শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জুনের মধ্যে চালু করা হবে।’

কিন্তু এই টার্মিনালের ইকুইপমেন্ট কেনার জন্য যে অর্থ নির্ধারণ ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ইকুইপমেন্টও কেনা হয়নি। তাহলে কীভাবে চালু করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন,‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ইকুইপমেন্ট রয়েছে। সেসব ইকুইপমেন্ট দিয়ে পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করা যাবে। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

এই টার্মিনালটি তো পিপিপি’র আওতায় অপারেটর নিয়োগের কথা। বন্দর কর্তৃপক্ষ হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম চালু করলে পিপিপি’র করনীয় কি হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘পিপিপি তাদের কার্যক্রম করছে। যখন তারা তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করবে তখন বুঝে নিবে। এখন যেহেতু টার্মিনাল প্রায় প্রস্তুত তাই তা বসিয়ে রাখা যাবে না।’

জানা যায়, সরকার ইতিমধ্যে ১৪৪৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে অপারেশন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর অপারেশনের দায়িত্ব যে পাবে সেই প্রতিষ্ঠানই ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করবে। সেই হিসেবে অপারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পাওয়ার পর কার্যক্রম শুরু করবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের ইকুইপমেন্ট বহরে থাকা অতিরিক্ত রাবার ট্রায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, রিচ স্টেকার, ফর্ক লিফটসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু জাহাজ থেকে কীভাবে কনটেইনার উঠানো ও নামানোর কাজ করা হবে জানতে চাইলে পিসিটি প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘যেসব জাহাজে ক্রেন রয়েছে সেসব জাহাজ দিয়ে পণ্য উঠানামার কাজ করা হবে। তাই এতে সমস্যা হবে না।’

উল্লেখ্য, এদিকে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের পিসিটির এই অংশে কর্ণফুলীর গভীরতাও বেশি। এছাড়া মোহনার খুব কাছে হওয়ায় কর্ণফুলীর ভেতরে জাহাজগুলোতে প্রবেশ করতে হবে না।

পতেঙ্গা বোট ক্লাব ও চিটাগাং ড্রাইডকের মধ্যবর্তী ২৬ একর জায়গায় চারটি জেটির সমন্বয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পিসিটি। এরমধ্যে তিনটি জেটি ( প্রতিটি ২০০ মিটার দীর্ঘ) হবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য এবং বাকি একটি ডলফিন জেটি (২২০মিটার দীর্ঘ)। ডিপিএম (সরাসরি সংগ্রহ পদ্ধতি) পদ্ধতিতে এই প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। ২০১৭ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বন্দরের জাহাজ জট কমবে এবং পণ্য হ্যান্ডেলিং কার্যক্রমেও সময় কমবে।