প্রকাশ্যে খুন দেখেও কেন এগিয়ে আসে না মানুষ

নগরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দিনেদুপুরে একজন ছুরিকাঘাতে খুন করছে অপর ব্যক্তিকে। এমন কিছু ছবি ও ভিডিও গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ দৃশ্য মুম্বাই বা ঢাকার কোনো অ্যাকশনধর্মী সিনেমার নয়। ঘটনার সময় তার চারপাশে এত মানুষ ছিল কিন্তু কেউ আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। উল্টো ঘটনার ছবি তুলতে ও ভিডিও ধারণে ব্যস্ত ছিল অনেকে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, নগরের পাহাড়তলীতে ভোটের ‘টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে যুবলীগ কর্মী জসিমের ছুরিকাঘাতে মো. হোসেন (৪৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা খুন হন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন নিহতের ছেলে অমিত হোসেন (২০)। নিহত হোসেন মান্না ওই এলাকার মধ্যম সরাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পাহাড়তলী ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। গতকাল রোববার দুপুর ২টার দিকে পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া এলাকায় এবতেদায়ি মাদ্রাসার সামনের পুকুরপাড়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, হোসেন ও জসিম দুজনই নগরের সরাইপাড়ার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। রোববার দুপুরে রাস্তায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হোসেনকে এলোপাতারি ছুরিকাঘাত করে জসিম পালিয়ে যায়। স্থানীয় কয়েকজন হোসেনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সমাজের অবক্ষয় ও পতন কতটা ঘটলে মানুষ দিবালোকে খুন করার সাহস পায় তা ভাবার সময় এসেছে। এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে খুনী জসিম কোনো পেশাদার খুনী নয়। অথচ সামান্য কথা-কাটাকাটির জেরে সে প্রকাশ্যে বন্ধুকে খুন করতে দ্বিধা করেনি। অর্থাৎ মানুষ খুন করা যেন খুব সহজ কাজ হয়ে উঠেছে।
একই সঙ্গে ভাবনায় ফেলে সাধারণ মানুষের নিস্পৃহতা দেখে। একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দিনেদুপুরে একজন খুন করছে দেখেও কেউ এগিয়ে এলো না। যত মানুষ মোবাইলে ভিডিও করেছে, ছবি তুলেছে তারাই সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে গেলে এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতো না হয়ত।
আজকাল মানুষের মধ্যে একধরনের স্বার্থপরতা প্রকট হয়ে উঠেছে। নিজের প্রত্যক্ষ লাভ-ক্ষতি বিবেচনা না করে সহজে কোথাও প্রতিবাদও করে না। নিজেকে জড়িতও করে না। এতে সমাজে অন্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুষ্কর্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজ থেকে যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ না হয়, অন্যায়কারী যদি সমাজে ঘৃণিত না হয় তাহলে সে সমাজে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। সাধারণ মানুষও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে সাহস পাবে না।
সমাজে শুভবোধ জাগরণের কাজটি সবাইকে মিলে করতে হবে। সেক্ষেত্রে আইনের শাসন যেমন জরুরি তেমনি জরুরি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। না হলে আরও ভয়ংকর ভবিষ্যৎ আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হতে পারে।