পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ডিসেম্বরেই ভিড়বে জাহাজ

অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বন্দরের ইকুইপমেন্ট দিয়ে চলবে হ্যান্ডেলিং

ভূঁইয়া নজরুল »

পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদী তীরের ৪০০ মিটার জেটি নির্মাণ প্রায় শেষ। ডিসেম্বরের মধ্যে জাহাজ ভেড়ানোর উপযোগী করতে পুরোদমে কাজ চলছে। তবে টার্মিনাল নির্মাণ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও ডিসেম্বরেই জাহাজ ভেড়াতে চায়। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এমনই পরিকল্পনা।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘আমরা যেভাবেই হোক ডিসেম্বরে জাহাজ ভেড়াতে চাই। এজন্য জেটি ও ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শেষ করতে পুরোদমে কাজ চলছে।’

গত শনিবার পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেটি নির্মাণে কাজ করছেন শ্রমিকরা। অপরদিকে ইয়ার্ড নির্মাণে মাটির পেভমেন্টের জন্য পে লোডার কাজ করছে। একইসাথে শেড নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ইয়ার্ডের উপর দিয়ে যান চলাচলের জন্য ওভারপাসটিও চালু হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ২৬ একর জায়গাজুড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যে জেটি ও ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শেষ হলেও ইকুইপমেন্ট তো এখনো কেনা হয়নি?তাহলে কীভাবে চালু হবে টার্মিনাল?

জানা যায়, সরকার ইতিমধ্যে এই প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে অপারেশন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। আর অপারেশনের দায়িত্ব যে পাবে সেই প্রতিষ্ঠানই ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করবে। এবিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আমিনুল ইসলামের সাথে।

তিনি বলেন,‘পিপিপি কর্তৃপক্ষ যতোদিন অপারেশনের জন্য কাউকে মনোনীত করতে পারবে না ততোদিন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ইকুইপমেন্ট দিয়ে তা পরিচালনা করবে।’

তিনি আরো বলেন, একটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন অর্ডার দিয়ে তৈরি করতে ১০ মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যায়। সেই হিসেবে এখনো যেহেতু কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের অর্ডার দেওয়া হয়নি তাই কমপক্ষে আরো একবছর সময় লাগতে পারে ইকুইমেন্ট আসতে।

ইকুইমেপমেন্ট জটিলতায় জেটি নির্মাণের পরও সাত বছর অপারেশনাল কার্যক্রম করা যায়নি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি)। পিসিটি নিয়ে একই আশঙ্কা করে চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এনসিটির মতো পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়। জেটি নির্মাণ হয়ে গেলে তা বন্দরের বন্দরের ব্যবস্থাপনায় চালু করে দিতে হবে। তবেই এর সুফল পাওয়া যাবে।’

নির্মাণের পর পিসিটি বসে থাকবে না উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের কাছে অতিরিক্ত থাকা স্ট্যাডল ক্যারিয়ার ও রিচ স্টেকারসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট দিয়ে টার্মিনাল চালু করে দেবো। পরবর্তীতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)’র আওতায় পরিচালনাকারী সংস্থা নিয়োগ দেওয়া হলে ওই সংস্থা কাজ করবে।’

এবিষয়ে পিপিপির মহাব্যবস্থাপক (প্রোগাম অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট) আবুল বাশার বলেন,‘পিসিটি পিপিপির আওতায় হবে। তবে এটা কীভাবে হবে তা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবে। আমরা শুধুমাত্র লজিস্টিক সাপোর্ট দেবো।’

এদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমাদের ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ। বাকি কাজ আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারবো। তবে এই প্রকল্পের আওতায় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ হচ্ছে না বলে এর বাজেট ১৮০০ কোটি টাকা থেকে কমে ১৪৪৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এর আওতায় টাগবোটসহ কিছু কেনাকাটা রয়েছে।’

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর কথা। এই ড্রাফট রাখতে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন হবে কি-না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার এম আরিফুর রহমান বলেন,‘প্রকল্পের আওতায় স্বল্প পরিমানে ড্রেজিং রয়েছে। জেটি নির্মাণ শেষে ড্রেজিং শেষ করতে প্রায় দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।’

উল্লেখ্য, পতেঙ্গা বোট ক্লাব ও চিটাগাং ড্রাইডকের মধ্যবর্তী ২৬ একর জায়গায় চারটি জেটির সমন্বয়ে পিসিটি গড়ে তোলা হচ্ছে। এরমধ্যে তিনটি জেটি (প্রতিটি ২০০ মিটার দীর্ঘ) হবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য এবং বাকি একটি জেটি হবে ডলফিন জেটি ( ২২০ মিটার দীর্ঘ)। ডিপিএম (সরাসরি সংগ্রহ পদ্ধতি) পদ্ধতিতে এই প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। ২০১৭ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বন্দরের জাহাজ জট এবং পণ্য হ্যান্ডেলিং কার্যক্রমে সময় কমবে।