নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশই কাম্য

বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৫২ জন। এর জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে কমিশন।
এক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই তফসিল ঘোষণা করলেন। একদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাইছে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন আয়োজন করার। অন্যদিকে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো চাইছে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।
কয়েকবছর ধরে এই দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও গত কয়েকমাস ধরে এই দাবিতে আন্দোলন তীব্র করেছে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো। বর্তমানে এই জোটের আহ্বানে সারাদেশে অবরোধ চলছে। বুধবার তফসিল ঘোষণার পর আগামী রবিবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বললেও বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর আন্দোলন আর অহিংস থাকছে না শেষ পর্ষন্ত। এরই মধ্যে অন্তত দেড় শতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের হাঙ্গামায় নিহত হয়েছেন এক পুলিশ। এসব ঘটনায় আহতের সংখ্যাও কম নয়। মানুষ মনে করছে সামনে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। যদিও তফসিল ঘোষণার সময় সিইসি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সকল রাজনৈতিক দলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, সংঘাত ও সহিংসতা পরিহার করে সদয় হয়ে সমাধান অন্বেষণ করতে। জনগণকে অনুরোধ করব, সকল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে।
আমরাও একই কথা বলতে চাই নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। সবদলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধিকে বেছে নিতে পারে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথে সকল অন্তরায় আলাপ-আলোচনার মধ্যে দূর হোক। সকলের মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত হোক।