নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে

২০২১ সালের ২৫ আগস্ট বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার সময় পা পিছলে সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমদ খালে পড়ে যাওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। ৩০ জুন জলাবদ্ধতার সময় মেয়র গলি এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা খালে পড়ে গিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়। সে বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ফুটপাত থেকে পা পিছলে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় কলেজ শিক্ষার্থী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার। ডিসেম্বরে বোতল কুড়াতে গিয়ে নালায় নিখোঁজ হয় কামাল নামের ১২ বছরের এক শিশু। তলিয়ে যাওয়ার তিনদিন পর মির্জাখালে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
এত প্রাণহানির পরও টনক নড়েনি সিটি করপোরেশন কিংবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। উন্মুক্ত নালাগুলো এখনও অরক্ষিত। কোনো ধরনের স্ল্যাব কিংবা দেয়া হয়নি নিরাপত্তা বেষ্টনী। মৃত্যুর ধারাবাহিকতায় এবার যুক্ত হলো নিপা পালিতের নাম। ৭ আগস্ট টানা বর্ষণের ফলে ১ নম্বর পাহাড়তলীর বাদামতল এলাকায় ড্রেনের উপচেপড়া পানিতে পড়ে মৃত্যু ঘটে হাটহাজারী কলেজের ছাত্রী নিপা পালিতের। জলাবদ্ধতায় নালা ও সমতল একাকার হয়ে পড়েছিল ফলে কোনটি নালা আর কোনটি চলার পথ তা বোঝার উপায় ছিল না পথচারীদের। নিপাও একারণে অকস্মাৎ নালায় পড়ে আর উঠতে পারেনি।
এরপর যা হয়েছে তা পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ঘটনার পরদিন (৮ আগস্ট) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের দাদা বাদল পালিতের হাতে নগদ ১ লাখ টাকা প্রদান করেন। সে সঙ্গে পরিবারের একজনকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু ঘটনার ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। ড্রেনটি সংস্কারে বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নিপা যে ড্রেনে পড়ে মারা গিয়েছেন সেই স্থানটি এখনও অরক্ষিত। বৃষ্টি বাড়লে যেকোনো সময় ঘটতে পারে আরও দুর্ঘটনা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে নালা-নর্দমায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। এর কোনোটিতেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। কাজেই বোঝা যাচ্ছে মহানগরের নাগরিকরা কী পরিমাণ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেকোনো কাজ শুরুর আগে কর্মক্ষেত্র ও তার আশেপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টোটাই ঘটে। ঘটার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর জন্য কাউকে কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না। ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে কিছু টাকা আর তার পরিবারের কাউকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যায়। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। জীবনের মূল্য কিছু টাকা আর দয়ার চাকরির নিক্তিতে মাপার বস্তু নয়।