নতুন তেলক্ষেত্রের সন্ধান আশাজাগানিয়া

৩৭ বছর পর আবার তেলের সন্ধান মিলেছে। সিলেটে একটি গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের সময় সেখানে তেল পাওয়া যায়। রোববার দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সুখবরটি জানান দিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সিলেটের জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট এলাকায় ১০ নম্বর কূপের প্রথম স্তরেই তেলের সন্ধান পাওয়ার কথা জানান তিনি। এছাড়াও চারটি স্তরে গ্যাস পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এর আগে ১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুরে। এটি পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিল। ওই সময় এপিআই গ্র্যাভিটি ছিল ২৭ ডিগ্রি। এবারে প্রাথমিকভাবে এপিআই গ্র্যাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি বলে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে এই অঞ্চলে দুই মাস আগে ড্রিল শুরু হয়। ২,৫৭৬ মিটার খনন সম্পন্ন হয়েছে। এর চারটি স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে । একদম নিচে গ্যাসের প্রবাহ ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত আর প্রেশার ৩২৫০ পিএসআই। এখানে গ্যাসের মজুদের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট। ১৩৯৭ থেকে ১৪৪৫ মিটার গভীরে যে জোন সেখানে ৮ ডিসেম্বর তেলের উপস্থিতি মিলেছে। এখন প্রতি ঘণ্টায় যে প্রেশার তাতে ৩৫ ব্যারেল তেল উঠছে। প্রথম দিন দুই ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে। কী পরিমাণ তেল এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে তা নিশ্চিত হতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে। তবে তেলের মজুদ সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা দেন নসরুল হামিদ। তিনি আশা করেন, যদি ২৫৪০ ও ২৪৬০ মিটার গভীরে একযোগে উৎপাদন করা হয় তাহলে এটি আট থেকে ১০ বছর স্থায়ী হবে। আর ২০ মিলিয়ন ঘনফুটে তেল উৎপাদন করা হলে তা ১৫ বছরের বেশি টিকে থাকবে। আর এর গড় মূল্য ৮৫০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সিলেট ১০ নম্বর কূপে ৪টি স্তরে গ্যাসের উপস্থিতিও পাওয়া যায়। নিচের স্তরটি ২ হাজার ৫৪০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ মিটার টেস্ট করে আড়াই কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রবাহ পাওয়া গেছে । মজুতের পরিমাণ ৪৩ থেকে ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট। ২ হাজার ৪৬০ থেকে ২ হাজার ৪৭৫ মিটারে আরও একটি ভালো গ্যাসের স্তর পাওয়া যায়, এখানে টেস্ট করলে আড়াই থেকে তিন কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া ২ হাজার ২৯০ থেকে ২ হাজার ৩১০ মিটারে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এই সময়ে বাংলাদেশের জন্য এরচেয়ে বড় আনন্দের খবর আর কিছু হতে পারে না। দেশে গ্যাস পাওয়া গেলেও তেল পাওয়া গিয়েছিল মাত্র একটি। তার মজুদও পাঁচ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি। তার ওপর বর্তমানে যে গ্যাস উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হয় না বলে বর্তমানে গ্যাসও আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। এর ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করতে হয় শুধু জ্বালানি তেল আমদানিতে। এই কূপ থেকে যদি তেল ও গ্যাস আহরণ করা যায় তাহলে দেশের অর্থনীতির জন্য তা হবে একটি আশাব্যঞ্জক খবর।
আশা করব সরকার এ বিষয়ে দক্ষ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে মজুত, উত্তোলন ও বিতরণের সিদ্ধান্ত নেবে। সমগ্র কাজে যেন সততা, দেশপ্রেম এবং পেশাদারী মনোভাব থাকে সেদিকে লক্ষ রাখে। শুধু এই কূপ নয় ভবিষ্যতে আরও তেল ও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হোক। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।