নতুন আমদানি নীতি আদেশে যেসব সুবিধা থাকছে

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চূড়ান্ত হয়েছে আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪। পরের তিন বছরের জন্য প্রণীতব্য আদেশটিতে দেশের আমদানি বাণিজ্য কোন মানদণ্ডে চলবে সেটার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নীতি-আদেশটি পরবর্তী মন্ত্রিপরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অনুমোদনের পর গেজেট জারির মাধ্যমে তা কার্যকর হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি নীতি আদেশটির নাম প্রস্তাব করেছে ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪।’ অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণীতব্য আমদানি নীতি আদেশে বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় আমদানির পথ কিছুটা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মর্যাদা রক্ষায় এটি করা হয়েছে।

রফতানি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে আমদানি নীতি আদেশটি আগের যে কোনও আদেশের তুলনায় সহজ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র।

কোনও আমদানি ও রফতানিকারক জাল কাগজপত্র দাখিল করে নিবন্ধন সনদ গ্রহণ বা গ্রহণের উদ্যোগ কিংবা আমদানি-রফতানি করলে নীতি আদেশের আওতায় তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে বলে বিধান রাখা হয়েছে। এক্সপোর্টস কন্ট্রোল অ্যাক্ট, ১৯৫০ অনুযায়ী এসব অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

আরও জানা গেছে, এ আদেশে থাকছে না পুরনো মোটরসাইকেল, ক্যাসিনো বা জুয়ার পণ্য আমদানির সুযোগ। বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে স্থানীয় শিল্পের প্রসারে। নতুন পদক্ষেপের পাশাপাশি আমদানির সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণে কিছু কড়াকড়িও আরোপ করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদের সভায় উপস্থাপনের জন্য ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪’ শীর্ষে রাখা হয়েছে সভার আলোচ্যসূচিতে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানোর নানা ছোট-বড় সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কোনও আমদানিকারক ব্লু-টুথ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল আমদানি করতে চাইলে আগেই বিটিআরসির অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনুমোদিত সনদও থাকতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নিয়মানুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর দেশে নতুন আমদানি নীতি আদেশ জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ২০১৮-২০২১ সালে তা করতে পারেনি। এ কারণেই সর্বশেষ আদেশ (২০১৫-১৮) এখন পর্যন্ত চালু আছে। নতুন আদেশ জারি হলে আগেরটা বিলুপ্ত হবে।

নতুন নীতিতে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উন্নয়নে আমদানি সহজ করার সুযোগ থাকছে। এখন ঋণপত্র খোলার পর ঋণপত্রের কপি ১৫ দিনের মধ্যে আমদানি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয়। নতুন নিয়মে ডিজিটাল মাধ্যমে জমা দিলেই চলবে।

আবার এখন আমদানির জন্য প্রাথমিক সনদের সর্বনিম্ন নিবন্ধন ফি ৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার্য করা আছে। বার্ষিক নবায়ন ফি ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, নতুন নীতিতে বছর বছর নবায়নের ঝামেলাও থাকছে না। একবারে পাঁচ বছরের জন্য সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রাথমিক নিবন্ধন ফি কমিয়ে ৩ হাজার টাকা এবং বার্ষিক নবায়ন ফি ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।

পর্যটন শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার অনুমোদিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁ, বার, সামাজিক ক্লাব, প্রাইভেট ক্লাব, চিত্তবিনোদন ক্লাবগুলোকেও তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যালকোহল ও অ্যালকোহলিক বেভারেজ আমদানির অস্পষ্ট নির্দেশনাকে স্পষ্ট করার প্রস্তাব রয়েছে নতুন নীতি আদেশে।

আমদানিকারকদের বার্ষিক আমদানির পরিমাণ সহজ করতে পাঁচটি শ্রেণিতে নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বার্ষিক আমদানি সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ১০ লাখ এবং এরপর ৫০ লাখ, ১ কোটি, ৫ কোটি ও এর বেশি—এমন পাঁচটি ভাগে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

এলসির পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতা চুক্তির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে পারবেন। এতে যে কেউ সহজেই বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সুযোগ নিতে পারবেন। বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতের ব্যবসায়ীদের নমুনা আমদানি সহজ করা হয়েছে নতুন নীতি আদেশে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে গত তিন বছরের আমদানি নীতি আদেশটি কার্যকর করা হয়নি। তবে চূড়ান্ত হওয়া আগামী তিন বছরের জন্য প্রণীতব্য ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪’ বাংলাদেশের ব্যবসার অগ্রযাত্রায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এতে স্থানীয় শিল্পেরও প্রসার ঘটবে। আশা করছি আগামী কেবিনেটে আদেশটি অনুমোদন পাবে।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন