নতুন অ্যালকোহল বিধিমালায় যা বলা হয়েছে

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশের নতুন অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী ২১ বছরের নীচে কেউ মদ্যপানের পারমিট পাবে না।

এ বিধিমালায় মূলত অ্যালকোহল জাতীয় মাদকদ্রব্য কোথায় বেচাকেনা হবে, মদ্যপায়ীরা কোথায় বসে মদ পান করবেন, পরিবহন করতে পারবেন কি না – এসব বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে বলে বলছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

ফলে এখন থেকে অ্যালকোহল আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ, বিপণন ও ক্রয় বিক্রয় এবং সংরক্ষণের জন্য অ্যালকোহল পারমিট, লাইসেন্স বা পাস গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ করে মদ বা মদ্য জাতীয় পানীয় পানের জন্য পারমিট আর পরিবহনের জন্য পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এ বিধিমালায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলছেন বিধিমালা না থাকার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পারফিউম স্যানিটাইজার তৈরিতে কিংবা শিল্পে ব্যবহৃত অ্যালকোহল খেয়ে মারা যাওয়া কিংবা অন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে।

“এবারই প্রথম বিধিমালা করা হলো। এর আগে এ সংক্রান্ত কোন বিধিমালা ছিলো না। শৃঙ্খলা আনার পাশাপাশি অ্যালকোহলের নামে খারাপ কিছু যেন বিক্রি না হয় আর সরকার যাতে রাজস্ব পায়- এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন এই বিধিমালা করা হয়েছে,” বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরেই ইয়াবা, আইস বা মেথ, এক্সটেসি এবং এলএসডির মতো মাদকের ব্যাপক ব্যবহার ঠেকাতে মদ বা বিয়ারের ওপর শুল্ক কমানোসহ অ্যালকোহলে ছাড় দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসছে।

গত ডিসেম্বরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছিলো।

ওই বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো যে দেশে অ্যালকোহলের ওপর ৬০০ শতাংশ শুল্ক থাকায় যেসব ক্লাবের অ্যালকোহলের লাইসেন্স আছে তারা কেউ আমদানি করে না, কারণ ট্যাক্স দিতে হয় বেশি।

ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা সাহা বলছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও এ বিষয়ে এনবিআরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

“আমরা মনে করি এনবিআর এটি বিবেচনা করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে ও দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে,” বলছিলেন তিনি।

বাংলাদেশে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮’ থাকলেও সেই আইনের আওতায় কোন বিধিমালা ছিলো না। মূলত ১৮৫৭ সালের ম্যানুয়ালই বিধিমালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো।

মিস্টার সাহা বলছেন এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ বেড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে নানা কারণে প্রচুর বিদেশি বাংলাদেশে আসছে। ফলে অ্যালকোহলের চাহিদা অনেক বেড়েছে।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই বিধিমালাটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ খাত থেকে সরকারের অনেক রাজস্ব আদায়ের সুযোগ আছে এবং তা নিয়েই এখন কাজ চলছে।

যা আছে নতুন বিধিমালায়

  • ২১ বছরের নীচে কোন ব্যক্তিকে মদ্যপানের পারমিট দেয়া যাবে না। অর্থাৎ এর বেশি বয়সী যে কেউ পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে এসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোন ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
  • হোটেল, রেস্তোরাঁয় বা যেসব স্থানে সাধারণ খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অ্যালকোহল সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয় তারা বার স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  • কোন এলাকায় একশ জন দেশি মদ বা বিদেশি মদের পারমিটধারী থাকলে অ্যালকোহল বিক্রয়ের লাইসেন্স দেয়া যাবে। অর্থাৎ কোন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানে যদি কমপক্ষে একশ জন সদস্য থাকেন যাদের এই পারমিট আছে সেখানেই অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে।
  • অ্যালকোহল বহন বা পরিবহনের জন্য অধিদপ্তর থেকে পাসের জন্য আবেদন করা যাবে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যে কোনো পথেই অ্যালকোহল পরিবহন করা যাবে। তবে সেটা পাসে উল্লেখ থাকতে হবে।
  • অ্যালকোহলে কোন ধরনের ভেজাল মেশানো যাবে না।
  • পারমিটধারী ক্লাব সদস্যরা ক্লাবের নির্ধারিত স্থানে বসে মদপান করতে পারবেন।
  • কোনো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে দুশো জন অ্যালকোহল পারমিটধারী থাকলে তাদেরকে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।
  • ইপিজেড, থিমপার্ক বা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে যেখানে বিদেশি নাগরিক থাকবে সেখানে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।
  • বিধিমালার অধীনে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, ডিউটি ফ্রি শপ ও প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বার স্থাপন লাইসেন্স দেয়া যাবে। যেমন ক্লাব ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে একটি করে আবার পাঁচ তারকা বা তার চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন সাতটিরও বেশি বারের লাইসেন্স দেয়া যাবে।
  • বিদেশি মদের জন্য ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  • বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন কোন দেশ থেকে অ্যালকোহল আমদানি করে বিলাতিমদ উৎপাদন করা যাবে।
  • সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ও যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল ব্যবহার ছাড়া বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।
  • সরকার নির্ধারিত বিয়ার ছাড়া অন্য কোন বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।
  • ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজ বাসায় মদপান করতে পারবেন।
  • বিদেশী মদ আমদানি বা রপ্তানির জন্য আবেদন করা যাবে।
  • বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না এমন ইথাইল অ্যালকোহল, অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, রেক্টিফাইড স্পিরিট, স্ট্রং অ্যালকোহল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেথিলেটেড স্পিরিট এবং শিল্প, গবেষণাগার ও অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার্য অ্যালকোহল আমদানি করা যাবে।
  • যে ব্রান্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন নেয়া হবে সেই ব্রান্ডের অ্যালকোহল আমদানি করতে হবে।
  • তবে পর্যটন কর্পোরেশন, বার বা সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ আমদানি করতে পারবে না
  • যে সব ক্লাবে মদ্যপানের পারমিটধারী সদস্যের সংখ্যা দুশো বা তার চেয়ে বেশি সেসব ক্লাব তাদের চাহিদা ৪০ শতাংশ আমদানি করতে পারবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন এসব বিধিমালা সঠিকভাবে মানা হলে এটি যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়াবে, তেমনি ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিরসনে হোটেল রেস্তোরাঁগুলোও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বার স্থাপন করতে পারবে, যে সুযোগ এতদিন অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো।

এখন সরকারের অনুমোদিত কিছু ওয়্যার হাউজ, লাইসেন্সকৃত পানশালা ছাড়াও অল্প কিছু তারকা হোটেলগুলো থেকে মদ ক্রয়ের সুযোগ আছে পারমিটধারী ব্যক্তিদের জন্য।

তবে বিয়ার, ওয়াইন, হুইস্কি কিংবা ভদকার মতো বিদেশি মদের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক থাকায় প্রায়শ ভেজাল মেশানো মদ্যপানের মতো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়।

সূত্র : বিবিসি বাংলা