নগরের সমস্যা সমাধানে খোলামেলা আলোচনা হোক

হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এত টাকা ব্যয় করার পরেও কেন জলাবদ্ধতা হবে? এটা আমাকে যন্ত্রণা দেয়। বারবার দগ্ধ হই। কী কাজ হচ্ছে তার আউটপুট চাই। শুধু মিটিং করলাম, রেজুলেশন করলাম; এগুলো শুনতে শুনতে বিরক্ত। জলাবদ্ধতা নিয়ে কোনো স্টাডি বা সমীক্ষা আছে কি আপনাদের?
এই কথাগুলো চট্টগ্রামের সংক্ষুব্ধ কোনো নাগরিকের নয়। এসব কথা বলেছেন স্বয়ং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী অনেক খোলামেলা কথা বলেছেন। সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো সেনাদানকারী সংস্থার ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
এ সময় তিনি চসিক রাজস্ব খাতে যে আয় করে এবং মশক নিধন খাতে যে ব্যয় করে তার হিসাব চান। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব আয় থেকে খাল রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলেও চসিক কেন পারছে না সে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, অর্থাৎ বন্দর থেকে কর্পোরেশনের জন্য প্রস্তাবিত রাজস্ব আদায়ে চসিককে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন। এই দাবিটি অযৌক্তিক নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় থেকে অন্তত ১ শতাংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে প্রদান করার দাবিটি বিভিন্ন স্তরে আলোচিত হলেও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কখনও আলোচনার উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন–-২০২২ এর খসড়ায় বন্দরের মোট আয়ের এক শতাংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে প্রদানের বিষয়ে প্রস্তাবনা হিসেবে থাকলেও পরবর্তীতে চূড়ান্ত আইনে তা সন্নিবেশিত হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের চেষ্টার বিষয়ে অভিযোগ আছে, ওরা ঠিকভাবে করছে না। সময় পেলে আমি নিজেও কয়েক জায়গা ভিজিট করতাম। এজন্য তো আমরা আপনাদের টাকা দিই। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে অত টাকা দিই। এখন আপনার কোথায় কীভাবে খরচ করেন বলেন। কেন এডিস মশা মানুষকে কামড়াবে? হ্যাঁ, ঢাকাতে ৯০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। ব্রাজিলে একদিনে ১১ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। পরশু ঢাকা সিটিতে হয়েছে ৫৬৯ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে চট্টগ্রাম শহর। চট্টগ্রামে আমরা কী করি? সকল নাগরিক যদি স্ব স্ব বাড়িটা পরিষ্কার রাখে, এডিস মশা তো হবে না। তিনি বলেন, আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব, আমাদের দায়িত্বটা পালন করছি?
এ ধরনের সভা আগেও হয়েছে তবে এবারের মতো এত খোলামেলা কথা সরকারের মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হয়নি। আমরা মনে করি এ ধরনের সভা বা মতবিনিময় জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় মন্ত্রী নিজেই যখন সমস্যাগুলোর ব্যাপারে সম্যক ধারণা পাবেন তখন তা সমাধানের উপায় বের করতে সুবিধা হবে তাঁর।